ভারত-যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে নেপালকে সতর্ক করলো চীন

0

ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র নেপাল থেকে চীন-বিরোধী কার্যকলাপ চালাতে পারে বলে নেপালকে সতর্ক করে দিয়েছে চীন।

চীন সফররত নেপালের জাতীয় এসেম্বলির স্পিকার গণেশ প্রসাদ তিমিলসিনা জানিয়েছেন, ‘এ ধরনের কার্যকলাপের ফলে তাদের (চীনের) সমস্যা হতে পারে।’

ঝাও লে জি এবং তিমিলসিনার মধ্যে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসে।

ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের ইস্যু কীভাবে এল চীন সফরে?

সাংহাই থেকে বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময়ে তিমিলসিনা বলেন, “নেপালের ভূখণ্ড ব্যবহার করে চীন-বিরোধী কাজ বন্ধের ব্যাপারে তারা খুবই গুরুত্ব দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “নেপাল সরকার বারবার বলে এসেছে যে তারা নেপালে চীন বিরোধী কার্যকলাপ চালাতে দেবে না। তারা (চীন) সতর্ক করেছে যে তিব্বতি শরণার্থীদের বেশে বা অন্য কোনওভাবে কেউ নেপালে প্রবেশ করে চীন বিরোধী কাজকর্ম চালাতে পারে।”

চীনা পক্ষও ইঙ্গিত দিয়েছে যে স্পিকার তিমিলসিনার সঙ্গে বৈঠকে তাদের নিরাপত্তা স্বার্থ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

শিনহুয়া সংবাদ এজেন্সিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে চীনের ন্যাশনাল কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ঝাও লে জি বলেছেন, দুই দেশের নিজেদের স্বার্থেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করা উচিত।

ঝাও লেজির উদ্ধৃতি দিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “নেপালের এক-চীন নীতিতে সর্বদা অটল থাকার জন্য, চীনের স্বার্থকে সমর্থন করা এবং তাদের ভূখণ্ডকে কোনও চীন বিরোধী কাজে ব্যবহার করতে না দেওয়ার জন্য নেপাল প্রশংসনীয় কাজ করেছে।’

কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনস নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, বিশ্বের সবথেকে জটিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে।

বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাইওয়ান সহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে নানা সময়েই। আবার সীমান্ত বিরোধের কারণে ভারত-চীন সম্পর্কও গত কয়েক বছর ধরে তিক্ত অবস্থায় পৌঁছিয়েছে, যার কোনও সমাধান এখনও পর্যন্ত হয়নি।

নেপাল নিয়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের উৎসাহ, উদ্বেগ চীনের

নেপালের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত দীনেশ ভট্টরাইয়ের মতে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মতো দুটি শক্তিধর দেশ যেভাবে নেপাল নিয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছে, তা নিয়েই বেইজিংয়ের উদ্বেগের প্রকাশ পেয়েছে চীনের সাম্প্রতিক বক্তব্যের মাধ্যমে।

দীনেশ ভট্টরাই নেপালের দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টাও ছিলেন।

দীনেশ ভট্টরাই বলেন, “আমেরিকা নিয়ে চীনের উদ্বেগ আগে থেকেই ছিল। এমনকি গত বছর মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন বা এমসিসি চুক্তি সংসদে পাশ হলে তারা কোআর্সিভ ডিপ্লোম্যাসির কথা বলেছিল। এখন যখন ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা যাচ্ছে, চীন ওই দুটি দেশকে একই বৃত্তে রেখে মন্তব্য করছেন বলেই মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, আমাদের সচেতন হতে হবে। এই মন্তব্যে বোঝা যায় যে নেপাল বিদেশি শক্তিগুলির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার অবস্থায় পৌঁছতে পারে।

তিনি আরও বলেন, “নেপাল একদিকে ভারত, অন্যদিকে চীনের মাঝামাঝি অবস্থান করে। ওই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।’

নেপালে ভারতের আরও জোরদার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র

ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান গত জানুয়ারিতে মন্তব্য করেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেপালকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির অংশ বলে মনে করে।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যা আশা করছে তা হল নেপালে চীনা প্রভাব কমাতে ভারত আরও জোরদার ভূমিকা রাখুক, কারণ ঐতিহাসিকভাবেই নেপালে ভারতের প্রভাব বেশি থেকেছে।’

গত বছর নেপাল যখন মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন নামে প্রায় ৬০ বিলিয়ন নেপালি রূপির একটি অনুদান অনুমোদন করে, তখনও যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একে অপরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিল।

আবার ২০২০ সালের শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিব্বতের প্রতি সমর্থন দেখানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করে।

আইনটি মার্কিন সরকারকে তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপকারী যে কোনও চীনা কর্মকর্তার উপর আর্থিক এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেয়।

নেপাল ও ভারতে তিব্বতি উদ্বাস্তুদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে।

২০২২ সালের মে মাসে, মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অফ স্টেট আজরা জেয়া, যিনি আবার তিব্বত বিষয়ক সমন্বয়কারীও, তিনি কাঠমান্ডুতে তিব্বতি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছিলেন।

সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক চীনা বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছিলেন যে নেপালের উচিত ছিল আরও বিচক্ষণতা দেখানোর, কারণ এধরনে সফর নেতিবাচক বার্তা দেয়।

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, চীনা সংবাদপত্রগুলি নেপাল সরকারের কিছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভারতীয় কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

চীন-নেপাল চুক্তি বাস্তবায়নে জোর

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং যখন ২০১৯ সালে নেপাল সফর করেছিলেন তখন দুই দেশের প্রতিশ্রুতি এবং চীনের অবকাঠামো প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা এক অঞ্চল এক পথ প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

নেপালের জাতীয় এসেম্বলির স্পিকারের বর্তমান চীন সফরে সে বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

তিমিলসিনা বলেন, বিআরআই প্রকল্পের ১০ বছর হয়ে গেছে। এর অধীনে প্রকল্পগুলির গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে।”

যদিও নেপাল ২০১৭ সালে বিআরআই স্বাক্ষর করেছিল, বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি সংস্থা জোর দিচ্ছে যে বড় প্রকল্পগুলি শুধুমাত্র চীনা ভর্তুকি দিয়ে তৈরি করা উচিত, কারণ চীনা ঋণ ভবিষ্যতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

জাতীয় পরিষদের স্পিকার বলেন, অতীতে করা চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় এসেম্বলিতে কোনও আইন প্রণয়ন করা উচিত কিনা তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here