ভারতের বিহার ও উত্তরপ্রদেশে আকস্মিক বজ্রঝড় ও ভারী বৃষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬১ জন। দীর্ঘ দাবদাহের পর হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে দুই রাজ্যের একাধিক জেলা।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিনে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির ভয়াবহতায় মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। প্রথমদিন বিহারের বেগুসরাই, মধুবনী, দ্বারভাঙ্গা এবং সমস্তিপুরে বজ্রপাতে প্রাণ যায় ১৩ জনের। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের অনেক জায়গায় হঠাৎ করেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়, নামে শিলাবৃষ্টি ও প্রবল বজ্রপাত। সেই দিনই বিহারে প্রাণ হারান আরও ২৫ জন এবং উত্তরপ্রদেশে ২২ জন। উত্তরাখণ্ডেও একজন বজ্রপাতে মারা যান।
বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর জানায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নালন্দা জেলা, যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ১৮। এছাড়া সিওয়ান জেলায় ২ জন এবং কাটিহার, দ্বারভাঙ্গা, বেগুসরাই, ভাগলপুর ও জেহানাবাদে ১ জন করে মারা গেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
বিরোধী দল আরজেডি-র নেতা তেজস্বী যাদব সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে বলেন, বিহারে শিলাবৃষ্টি, ঝড়, বজ্রপাত, গাছ ও দেয়াল ধসের ঘটনায় প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমি নিহতদের পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এই কঠিন সময়ে উপরওয়ালা যেন তাদের শক্তি দেন।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার দ্বারভাঙ্গা, পাটনা ও নালন্দায় অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই ওইসব জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পাটনায় ৪২.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যার ফলে শহরের বহু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে উত্তরপ্রদেশের অন্তত ১৫টি জেলায় তাণ্ডব চালায় ঝড় ও বজ্রপাত। এতে প্রাণ হারান ২২ জন। ফতেপুর ও আজমগড়ে ৩ জন করে, ফিরোজাবাদ, কানপুর-দেহাট ও সীতাপুরে ২ জন করে এবং গাজীপুর, গোন্ডা, আমেথি, সন্থ কবির নগর, সিদ্ধার্থনগর, বালিয়া, কনৌজ, বারাবাঁকি, জৌনপুর ও উন্নাও জেলায় ১ জন করে মানুষ মারা যান।
ঝড়ে বহু কাঁচা বাড়ি বিধ্বস্ত হয় এবং গবাদিপশুরও মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে উত্তরাখণ্ডের উধম সিং নগরে বজ্রপাতে প্রাণ হারান এক কৃষক। ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতের শিকার হন।
অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ডেও ঝড় ও শিলাবৃষ্টির প্রভাবে আহত হয়েছেন অন্তত ৪ জন। ধানবাদ, হাজারীবাগ ও কোডারমা জেলায় চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, উপড়ে পড়েছে বহু গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি।
প্রবল দুর্যোগে তিনটি রাজ্যজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক সংকট ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এখনও রয়ে গেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল