ভারতে ওয়াকফ আইন: অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ নয়, বৃহস্পতিবার ফের শুনানি

0

‘ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন’ নিয়ে কোনও অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিল না ভারতের শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার ফের আদালতে এই মামলার শুনানি হবে।

‘ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন’এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে ভারতের শীর্ষ আদালতে এখনও পর্যন্ত ৭৩টি পিটিশন জমা পড়েছে। তারই শুনানি ছিল এদিন।

বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষ বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথন। এই শুনানিতে কেন্দ্রের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা, অন্যদিকে মামলাকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভি, রাজীব দাভেন প্রমুখ।

এই পিটিশনে যেমন সাম্প্রতিক বিলের সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ১৯৯৫ সালের মূল ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে হিন্দু পক্ষের দায়ের করা দুটি পিটিশন রয়েছে, আবার আইনটির উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশও চেয়েও কেউ কেউ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে- কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, জনতা দল ইউনাইটেড, আসাদুদ্দিন ওয়াইসির ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন’, জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস, অভিনেতা বিজয়ের ‘তামিলগা ভেত্রি কাঝাগাম’, এর মতো রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ, জমিয়াত উলেমা-ই-হিন্দসহ অন্য কিছু মুসলিম সংগঠন।

এদিন শীর্ষ আদালত মূলত তিনটি বিষয়ের উপর জোর দেয়। প্রথমতঃ যতদিন পর্যন্ত এই মামলা চলছে, ততদিন অবধি আদালত কর্তৃক ওয়াকফ ঘোষিত সম্পত্তিকে ‘ডিনোটিফাই’ (রদবদল) করা যাবে না। 

দ্বিতীয়তঃ কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ না কি সরকারি সম্পত্তি- সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত চলাকালীন সেই সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলে গণ্য করা হবে না বলে সংশোধনী আইনে যেটা উল্লেখ রয়েছে- এখন সেই নির্দেশ কার্যকর হবে না। 

তৃতীয়তঃ ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কমিটির সব সদস্যকে মুসলিম হতে হবে। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম সরকারি কর্মকর্তারা বা কোন পক্ষের প্রতিনিধি হওয়ার দরুন যারা আপনা-আপনি বোর্ডের সদস্যপদ পান। তাদের ক্ষেত্রে ধর্ম পরিচয় বাধ্যতামূলক নয়।

সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন ‘হিন্দুদের দাতব্য ট্রাস্টের বোর্ডে মুসলিমদের কি জায়গা হবে? সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারায় ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। এটা সব সম্প্রদায়ের জন্যই প্রযোজ্য।’

উল্লেখ্য গত ২ এপ্রিল ভারতের লোকসভায় পাস হয় বিতর্কিত ‘ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল-২০২৫’। পরদিন ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় এই বিল পাস হয়। গত ৫ এপ্রিল সেই বিলে দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হয়। ৮ এপ্রিল থেকে গোটা দেশে কার্যকর হয় ওয়াকফ আইন।

যদিও এই আইনের প্রতিবাদে গোটা ভারতেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তা সহিংসতায় রূপ নেয়, তাতে তিনজনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি পুলিশ ও ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ, সম্পত্তি নষ্ট, বাড়ি-দোকান ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, গুলি চালানোর মতো ঘটনাও ঘটে।

সেই ঘটনাতেও শীর্ষ আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করে এদিন জানায়, ‘ওয়াকফ নিয়ে এই সহিংসতা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

ভারতের সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতাও বলেন, “অশান্তি তৈরি করে চাপ সৃষ্টি করা কোনও কৌশল হতে পারে না।”

সমালোচকদের দাবি, ওয়াকফ সংশোধিত আইন মুসলিমদের মৌলিক অধিকার খর্ব করবে এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার একটা প্রচেষ্টা।

তবে সরকারের বক্তব্য, ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতেই এই সংশোধনী অপরিহার্য ছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দাবি, এই আইনের ফলে ওয়াকফ বোর্ড পিছিয়ে পড়া ও দলিতদের সম্পত্তি কেড়ে নিতে পারবে না। এমনকি দরিদ্র এবং পাসমন্দা মুসলিমরাও নিজেদের অধিকার ফিরে পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here