ভারতের যে নারী কুস্তিগিরকে কোনো পুরুষ হারাতে পারেনি

0

১৯৫০ এর দশকে যখন ভারতে নারীদের কুস্তি লড়াটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, তখনই পুরুষ পালোয়ানদের একটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসেছিলেন হামিদা বানু। ওই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ১৯৫৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দু’জন পুরুষ চ্যাম্পিয়ন কুস্তিগির হেরে গিয়েছিলেন হামিদা বানুর কাছে। ওই দু’জনের একজন ছিলেন পাটিয়ালার, অন্যজন কলকাতার।

সে বছরই মে মাসে তৃতীয় লড়াইয়ে নামার জন্য হামিদা বানু বরোদার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলেন। তার বরোদা আসার কথা জেনে শহরে একটা হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। বরোদার বাসিন্দা, পুরস্কৃত খো-খো খেলোয়াড়, ৮০ বছর বয়সী সুধীর পরব সেই সময়ে স্কুলের ছাত্র ছিলেন।

কুস্তির লড়াই দেখার জন্য দর্শকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল প্রাচীন ইউনানি লড়াইয়ের মতো করে। কিন্তু হামিদা বানু দর্শকদের কৌতুহল মেটানোর জন্য কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন।

সংবাদ এজেন্সি ‘এপি’ প্রতিবেদন করেছিল, ‘ওই লড়াই মাত্র এক মিনিট ৩৪ সেকেন্ড ধরে চলেছিল। হামিদা বানু বাবা পালোয়ানকে চিৎ করে ফেলেছিলেন।’

রেফারি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে হামিদা বানুকে বিয়ে করার কোনো সম্ভাবনাই আর নেই বাবা পালোয়ানের। হামিদা বানুর প্যাঁচ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ বাবা পালোয়ানও ঘোষণা করেন যে সেটিই ছিল তার শেষ ম্যাচ।

ভারতের প্রথম পেশাদার নারী কুস্তিগির হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠা হামিদা বানু সাহসের সঙ্গে সেই সব চিরাচরিত কাহিনীগুলিকে বদলিয়ে দিচ্ছিলেন, যেখানে নারীদের দুর্বল হিসেবে দেখানো হত। সেই সময়ে কুস্তিকে পুরুষদের ক্রীড়া বলেই দেখানো হত।

কেউ তাকে হারাতে পারেনি

সেই সময়ে এটা একটা ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল যে হামিদা বানু কম জোর পালোয়ানদের বিরুদ্ধেই ম্যাচে নামছেন।

মহেশ্বর দয়াল ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত তার বই ‘আলম-এ-ইন্তখাব -দিল্লি’তে লিখেছেন, “তিনি একেবারে পুরুষ পালোয়ানদের মতোই লড়াই করতেন। যদিও কেউ কেউ মনে করত যে হামিদা বানু আর পুরুষ পালোয়ানদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া আগে থেকেই হয়ে যেত যাতে পুরুষরা জেনেশুনেই হামিদার কাছে হেরে যেতেন।’

পুরুষ লেখকদের মধ্যেও কেউ কেউ তাকে নিয়ে মজা করতেন আবার তার কৃতিত্ব নিয়ে প্রশ্নও তুলতেন।

নারীবাদী লেখিকা কুর্রতুল এন হায়দর তার কাহিনী ‘ডালনওয়ালা’তে হামিদা বানুর প্রসঙ্গে লিখেছেন, “১৯৫৪ সালে মুম্বাইতে একটা সর্বভারতীয় কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে হামিদা বানু তার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিলেন।

তিনি লিখছেন, “কোনও মায়ের বেটা ওই বাঘের বাচ্চাকে হারাতে পারল না আর ওই প্রতিযোগিতাতেই অধ্যাপক তারাবাঈও দারুণ কুস্তি লড়েছিলেন। ওই দুই নারী পালোয়ানের ছবি বিজ্ঞাপনেও ছাপা হয়েছিল। সেইসব ছবিতে তাকে গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। তার গলায় অনেক পদক ঝুলছিল। ওইভাবেই তিনি ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছিলেন।’

সেই সময়ের রেকর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে যে ১৯৫৪ সালেই মুম্বাইতে বিখ্যাত রাশিয়ান কুস্তিগির ভিরা চেস্তলিনকে এক মিনিটেরও কম সময়ে পরাজিত করেন। সে বছরই হামিদা বানু ইউরোপীয় পালোয়ানদের সঙ্গে কুস্তি লড়তে ইউরোপ যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।

কিন্তু ওইসব স্মরণীয় কুস্তি ম্যাচগুলির পরে হঠাৎই হামিদা বানু কুস্তি জগৎ থেকে হারিয়ে যান। তারপরে হামিদা বানুর নাম শুধুই ইতিহাসের পাতায় নজরে আসে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here