কেউ কেউ তাকে ‘স্কার্ট পড়া পেলে’ নামে ডাকতো, তবে ব্রাজিলিয়ান এই নারী ফুটবল তারকা তার সমর্থকদের কাছে ‘কুইন মার্তা’ হিসেবেই পরিচিত। চলমান বিশ্বকাপের পরে আর দেখা যাবে না নারী ফুটবলের এই জীবন্ত কিংবদন্তীকে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ৩৭ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার নিশ্চিত করেছেন নিঃসন্দেহে এটাই হতে যাচ্ছে তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। যদিও পারফরমেন্স বিবেচনায় ফুটবলের এই রানীকে তার দল প্রথমবারের মত বিশ্ব আসরের শিরোপা দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। মার্তা নিজেও ইনজুরির সাথে লড়াই করতে করতে এখন অনেকটাই ক্লান্ত।
সম্প্রতি মার্তা ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন। নারী ফুটবলের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। ২০০৭ সালে সেলেসাওরা যখন প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল তখন আন্তর্জাতিক ভাবে মার্তাকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। এর আগে অবশ্য ব্রাজিলের হয়ে ২০০৪ সালে অলিম্পিকে রৌপ্য পদক জয় করেছেন মার্তা। চার বছর পরের অলিম্পিকেও সেই পদক ধরে রেখেছিল ব্রাজিল।
বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পুরুষ ও নারী দল মিলিয়ে পাঁচ আসরে মার্তা সর্বকালের সর্বোচ্চ ১৭ গোল করে ইতিহাস রচনা করেছেন। তার থেকে একটি কম গোল করেছেন জার্মান তারকা মিরোস্লাভ ক্লোজা। এখন তার সামনে সুযোগ সেই রেকর্ডকে আরো সমৃদ্ধ করা।
এবারের দলে মার্তা তার দীর্ঘদিনের দুই অভিজ্ঞ সতীর্থকে পাচ্ছেন না। সতীর্থ আরেক কিংবদন্তী ফোরমিগা সাতটি বিশ্বকাপ খেলার পর ২০২১ সালে অবসর নিয়েছেন। অন্যদিকে ৩৮ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানে এবারের দলে জায়গা পাননি। গুরুতর হাঁটুর ইনজুরির কারণে মার্তা নিজেও প্রায় এক বছর মাঠের বাইরে ছিলেন। ২০০৩, ২০১০ ও ২০১৮ সালের তিনবারের কোপা আমেরিকা বিজয়ী মার্তা গত বছর ইনজুরির কারণে এই টুর্ণামেন্টে খেলতে পারেননি। ব্রাজিল সফলভাবে তাদের শিরোপা ধরে রেখেছিল। ফেব্রুয়ারিতে দলে ফিরে জাপানের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয়ের মাধ্যমে ব্রাজিলকে শিবিলিভস কাপ উপহার দেন। ঐ ম্যাচে ফিরে মার্তা বলেছিলেন, ‘ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মত এত লম্বা সময় আমি খেলার বাইরে ছিলাম। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি।’
মার্তা হয়তোবা ব্রাজিল কিংবদন্তী পেলের মত তিনটি বিশ্বকাপ জয় করতে পারেননি, কিন্তু নারী ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম বর্ণাঢ্য একজন খেলোয়াড় হিসেবে মার্তার নাম লেখা থাকবে। ছয়বার তিনি ফিফার বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড় বিবেচিত হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থেকে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। জাতিসংঘের লিঙ্গ সমতার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। ব্রাজিলের নারী ফুটবলারদের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম মার্তা। -বাসস।