ব্রাজিলে স্বাধীনতা দিবসের সমাবেশে শতাধিক দেশের কূটনীতিক

0

ব্রাসিলিয়ায় অবস্থিত দক্ষিণ আমেরিকাতে বাংলাদেশের একমাত্র দূতাবাসে উদযাপিত হল ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ২৬ মার্চ সকালে দূতাবাসে কর্মরত সকলের উপস্থিতিতে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রদূত। 

দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রেরিত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এ ছাড়াও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর শহীদ পরিবার, সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মরণীয় অবদানকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। রাষ্ট্রদূত ১৯৭১-এর গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহিদ, ২ লক্ষাধিক সম্ভ্রম-হারা মা-বোনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কাল রাতের নির্মম হত্যাকান্ডে নিহত ১৮ জন সদস্যের স্মৃতির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলা এবং ১৯৭১ এ বাংলাদেশে সংগঠিত ইতিহাসের অন্যতম বর্বর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবী জানান।

বাংলাদেশের ক্রমঅগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বরূপ বর্ণনা করে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের সাফল্য সম্পর্কে অতিথিবৃন্দের নিকট উপস্থাপন করেন। এশিয়ার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সাথে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম-বলে তিনি মন্তব্য করেন।
  
বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় ব্রাজিলের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে অর্থনৈতিক, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, কৃষি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে রাষ্ট্রদূত ব্রাজিল-বাংলাদেশ সম্পর্ককে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। 

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও লাভজনক বিনিয়োগের চিত্র তুলে ধরে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র সকল অতিথিকে মুগ্ধ করে। এছাড়াও রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের শেষে ব্রাজিলের ফুটবলের সমর্থনে বাংলাদেশে যে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস আর জোয়ার সৃষ্টি হয় তার একটি ভিডিও দেখানো হয়।  
বিশেষ অতিথি অ্যাম্বাসেডর এডুয়ার্ডো সাবোয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। 

তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে ব্রাজিল তাঁর অন্যতম। বিগত বছরগুলিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ব্রাজিল ও বাংলাদেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় আগামী দিনগুলোতেও রাজনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারীমন্ত্রী সিডা গনজালভেজ বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে ৫৩তম মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান। 

উল্লেখ্য, ব্রাজিলের নবগঠিত মন্ত্রিসভার এই সদস্য সিডা গনজালভেজ ব্রাজিলের নারী আন্দোলনের একজন অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি তাঁর স্বাগত বক্তব্যে নারীর ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তা ও সমাজের প্রতি স্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনের আহ্বান জানান। নারীর জীবনমানের উন্নয়ন ও নারী অধিকার নিশ্চিতে ব্রাজিল ও বাংলাদেশ একত্রে কাজ করবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

ব্রাসিলিয়ার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিশেষায়িত স্কুল ‘ক্যাসা আজুল’ (Casa Azul)’র শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গানের সাথে একটি মনোজ্ঞ পরিবেশনা উপস্থিত অতিথিদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে বাংলাদেশ ও  ব্রাজিলের জাতীয় সংগীতের মঞ্চায়ন করে ব্রাজিল নৌবাহিনীর একটি বাদক দল যা সকলের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করে। 

এ ছাড়া বাংলাদেশের বাঁশিতে শাস্ত্রীয় সুরের মূর্ছনা পুরো অনুষ্ঠানকে একটি ভিন্নমাত্রা দেয়। যা উপস্থিত অতিথিবৃন্দকে বিমোহিত করে। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের বছরব্যাপী কর্মকাণ্ড এবং বাংলাদেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানসমূহের আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়।  অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথির জন্য ঐতিহ্যবাহী কাচ্চি বিরিয়ানী, বাংলাদেশি মিষ্টি, পায়েশসহ রাতের খাবারের আয়োজন ছিল।

দূতাবাসের এ আয়োজন ব্রাজিলের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় যা ব্রাজিল তথা সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকাতে ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ- প্রচারণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। ব্রাসিলিয়ার প্রথম সারির অধিকাংশ পত্রিকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।  

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here