বাংলাদেশে ব্যবসায় বিনিয়োগ এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। আর দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
রবিবার খুলনার একটি হোটেলে সিজিএস আয়োজিত এক আঞ্চলিক মতবিনিময় সভায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা এ কথা বলেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত দুর্নীতির সম্মুখীন হওয়া এবং এই দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত জাতীয় প্ল্যাটফর্ম, ফোরাম ফর ফেয়ার বিজনেস গোড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সিজিএসের পাবলিক রিলেশনস কো-অর্ডিনেটর সঞ্জয় দেবনাথের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মতবিনিময় সভার শুরুতে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উপ-জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাবজনিত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা এসএমই খাতকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া পুরোপুরি বুঝতে এবং তা অনুসরণ করতে বাধা দেয়। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শক সভাগুলোতে অনেক এসএমই উদ্যোক্তা গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যেমন- ট্রেড লাইসেন্স আবেদন, অনলাইন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা এবং লেটার অব ক্রেডিট পাওয়ার ক্ষেত্রে সহজলভ্য নির্দেশিকার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সিজিএস বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়িক নেতা ও এসএমই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি গুড গভর্ন্যান্স টুলকিট তৈরি করছে। একইসঙ্গে সিজিএস মতবিনিময় সভার আয়োজন করছে, যা শুধুমাত্র জ্ঞান প্রদান নয় বরং এসএমই উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করার জন্যও ডিজাইন করা হয়েছে। এই মতামত টুলকিটসহ অন্যান্য প্রকল্পের আউটপুট উন্নত করতে সাহায্য করবে, যাতে বিভিন্ন অঞ্চলের অনন্য চাহিদা পূরণ করা যায়। আলোচনাগুলোর মধ্যে থাকবে নৈতিক আচরণবিধি, স্বচ্ছতা চুক্তি, নির্দেশিকা এবং ফোরামের কাঠামোসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক ফোরামের প্রতিনিধিত্বের জন্য সুপারিশ।
মতবিনিময় সভায় খুলনার উদ্যোক্তারা উল্লেখ করেন যে, দেশে উদ্যোক্তারা ব্যবসা শুরু করার আগে প্রাথমিক প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করার চর্চা অনুসরণ করেন না। যেখানে অন্যান্য দেশে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। দুর্নীতি এড়ানোর জন্য ব্যবসা শুরুর আগেই ট্রেড লাইসেন্স এবং ট্যাক্স সম্পর্কিত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জরুরি।
তারা আরও জানান, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান জটিলতা এবং অতিরিক্ত নবায়ন ফি’র কারণে নতুন ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে, যা সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি। ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাও জরুরি। এছাড়া, শোরুম ভাড়া দেওয়ার সময় অগ্রিম অর্থ প্রদান সংক্রান্ত বিষয়টি টুলকিটে অন্তর্ভুক্ত করার এবং এর জন্য নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণের আহ্বান জানান তারা।
ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ফোরামের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার পরামর্শও উঠে আসে আলোচনায়। ব্যবসার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমানোর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়। অনলাইন ব্যবসায় কিছু উদ্যোক্তা প্রোডাক্ট এত কম মূল্যে বিক্রি করছেন যে, অফলাইনে একই প্রোডাক্ট বিক্রির ক্ষেত্রে তা অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করছে। এই প্রতিযোগিতামূলক দিকটিকে টুলকিটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এছাড়া, সম্মিলিতভাবে একটি দুর্নীতিবিরোধী প্লাটফর্ম তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা এবং সেই প্লাটফর্মে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের আগ্রহ আলোচনা সভায় প্রকাশ পায়। ধারণাটি হলো যে, এফএফবির সদস্যরা একে অন্যকে তাদের ব্যবসায় ন্যায়সংগত এবং স্বচ্ছ হতে উৎসাহিত করবে।
সিজিএস কী?
সিজিএস বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি থিংক ট্যাংক যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বিষয়ে গবেষণা ও মিডিয়া স্টাডি পরিচালনা করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হলো- শিক্ষাগত সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে শাসনের মান উন্নত করা, বাংলাদেশের নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করা, দারিদ্র্য নিরসনের জন্য উপলব্ধ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের শর্ত তৈরি করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং বর্ধিত গণতন্ত্রীকরণ, অংশগ্রহণ ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা।