বোস্টনে নবগঠিত বাংলাদেশ লিটারেচার ও কালচারাল সোসাইটির মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

0

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে ‘বাংলাদেশ লিটারেচার ও কালচারাল সোসাইটি’ নামে একটি সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। 

১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয় নর্থরিডিং শহরের অল্ডারসগেট ইউনাইটেড মেথোডিস্ট চার্চের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মহান একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে এ সংগঠনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংগঠনের আহ্বায়ক কবি ও লেখক জহিরুল হক ভুইয়া মুকুল।

সংগঠনের অন্যতম সদস্য কাজী নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং মুহাম্মদ মর্তুজা ও ডিম্পল তানুর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মহান একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপন অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ লিটারেচার ও কালচারাল সোসাইটি’ সংগঠনের নেপথ্য কথা তুলে ধরে কবি জহিরুল হক ভুইয়া মুকুল বলেন, আমি আজ বাঙালি হিসাবে গর্বিত যে আমরা মায়ের ভাষা রক্ষার যে আন্দোলন করেছি তা পৃথিবীতে বিরল! তাই আজ আমরা এখনও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছি। আজ আপনাদের উপস্থিতি তাই প্রমাণ করছে, আর সেটি হলো আমরা যেন কোথায় যেন একটি জায়গায় বাঁধা সেটি হলো মোদের মাতৃভাষা, বাংলা ভাষা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কৃষ্টি কালচার, আচার আচরণ, চলন বলন, কথোপকথন, খাওয়া দাওয়ার মধ্যে ও রয়েছে অভিন্নতা। আর সেই অভিন্নতাই খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের বাংলাদেশিদের জাতি সত্ত্বার পরিচয়।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠে। ১৯৫২ সালে তা বিস্ফোরিত হয়ে উঠে দাবানলে। এই ভাষা রক্ষার আন্দোলনের পথিকৃত ছিলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম, আহ্বায়ক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নুরুল হক ভুইয়া, ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ড. কাজী মোতাহার হোসেনসহ আরও অনেকেই। আর তাদের নেতৃত্বে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ভাষা আন্দলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজপথে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত ও জব্বার। আর সেই থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা পালন করে আসছে একুশে ফেব্রুয়ারি। ফেব্রুয়ারি মানেই বাংলাদেশিদের শোকের মাস।

আজ এই একুশে ফেব্রুয়ারি দুঃখের মাসে আমি অতি গর্বের সাথে আপনাদেরকে জানাতে চাই, আমাদের বোস্টনের কিছু গুণী প্রবাসী বাংলাদেশি সাহিত্য ও সংস্কৃতি অনুরাগী ভাই বোনেরা একত্রিত হয়ে দ্য বাংলাদেশ লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটি অফ বোস্টন নামে একটি সংগঠন চালু করেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে আমরা আপানাদের উপস্থিতিতে এ সংগঠনটি উদ্বোধন ঘোষণা করেছি। এ রকম একটি সংগঠন তৈরি করা ছিলো আমাদের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন, ঐকান্তিক ইচ্ছা ও সময়ের দাবি, যা আজ আপনাদের উপস্থিতিতে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এই সংগঠনটি একটি সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা এবং জ্ঞান আহরণ ও বিনিময়ের অন্যতম প্লাটফর্ম। আমাদের এই সংগঠনটি একটি অলাভজনক, অরাজনৈতিক এবং অসাম্প্রদায়কি সংগঠন। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই সংগঠনটি বোস্টনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা তাদের নিজস্ব পরিচয় খুঁজে পাবে এবং একজায়গায় দাঁড়াতে পারবে। এই সংগঠনটি প্রবাসে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে সহায়ক হবে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রবাসে এই সংগঠনটি হোক আমাদের বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালন, ধারণ ও চর্চা করার জন্য একটি বৈচিত্র্যময় ও উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। আমি নিশ্চিত বোস্টনে এই সংগঠনটি আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করবে এবং বাংলাদেশি সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিবে।এই বিশ্বাস ও গভীর ভালোবাসা থেকেই আমাদের এই সংগঠনের জন্ম।

সংগঠনের অন্যন্য সদস্যরা হলেন-কাজী নুরুজ্জামান, তাপস বড়ুয়া, মুহাম্মদ মর্তুজা, জাহিদুল ইসলাম, সাবিনা চৌধুরী, বিদ্যুৎ রহমান, কবি রেজা নূর, কবি রোকেয়া জামান, ফেরদৌসী জেসমিন, জহির আনাম খান, ফরিদা খান, উৎপল বড়ুয়া, মিজান চৌধুরী ও মুর্শীদুল হক।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের বাণী পাঠ করা হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। ভাষা শহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা ও এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। কবিতা ও দেশাত্ববোধক সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় অনুষ্ঠানে। কবিতা আবৃত্তি করেন কবি আকরাম ভুইয়া, কবি নসরুল্লাহ তারেক, কবি রেজা নুর, কাজী নুরুজ্জামান, কবি রোকেয়া জামান ও নাজদা আলম। সঙ্গীত পরিবেশন করেন রেহনুমা দোলা, বিদ্যুৎ রহমান, কামরুল আলম জুয়েল, মানবেশ বড়ুয়া, নাসরীন শিবলী রুমী ও আব্দুল্লাহ শিবলী। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরের নানা শ্রেণি পেশার শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশিরা উক্ত অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here