কৃষকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে না পারা এবং কৃষি বিভাগের সুষ্ঠু মনিটরিং না থাকায় প্রতিবছর বোরো ধান উৎপাদনে কোটি কোটি লিটার পানির অপচয় হচ্ছে। এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ পানি লাগে এর চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ পানি ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
এছাড়া বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলনের ফলে প্রতিবছরই রংপুরসহ আশপাশ এলাকার পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রতি বছর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৩০ হাজার কোটি লিটার বেশি পানি অপচয় হচ্ছে সচেতনতার অভাবে।
প্রতি কেজিতে ধান উৎপাদনে ১০০০ হাজার লিটার পানি বেশি খরচ হলে সেই হিসেবে অতিরিক্ত পানি খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি লিটার। এসব পানি গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে উত্তোলন করা হচ্ছে। পানির অপচয় রোধে সরকার কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন করেছে। আইনটি পাশ হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু ৫ বছরেও এই আইনটি এ অঞ্চলে বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। ফলে লাখ লাখ সেচ যন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন বন্ধ করা হচ্ছে না। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, নতুন করে গভীর নলকূপ বসানোর অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
রংপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আগাম নেমে যেতে শুরু করে। ১০ বছর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে পানির স্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে থাকলেও এখন অনেক স্থানে পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচেও পাওয়া যায় না। পানির প্রবাহ যখন স্বাভাবিক থাকে তখন এ অঞ্চলে পানির স্তর ১২ ফুট নিচে পাওয়া যায়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র মতে এই অঞ্চলে সেচ মৌসুমে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দেয়া হয়। এর অধিকাংশই অপরিকল্পিত ভাবে বসানো হয়েছে। যা দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের বুড়িহাট হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু সায়েম এ প্রসঙ্গে বলেন, ধানগাছ কখনও জলজ উদ্ভিদ নয়। তবে ধান গাছ পানি পছন্দ করে। কৃষকরা না বুঝেই এই পানি খরচ করছেন। এর পিছনেও একটি কারণ রয়েছে। কৃষকরা জমিতে সেচ দেন চুক্তিভিক্তক। চুক্তি মতে ৪ থেকে ৬ বারও জমি সেচ দেয়া হয়। এতে পানি কতটুকু খরচ হল কৃষক এবং পাম্প অপারেটর কেউ বুঝতে পারে না। এ বিষয়ে কৃষক ও পাম্প অপারেটরদের সচেতন করা জরুরি।