বিদেশি বিনিয়োগে গতি আনতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানোর কৌশল হিসেবে প্রণোদনার সম্ভাব্যতা পর্যালোচনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গত ২৯ মে এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে।
সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এফডিআই বাড়াতে প্রণোদনা কার্যকর হবে কি না, কী ধরনের প্রণোদনা দেওয়া যায়, এসব বিষয়ে বিশ্লেষণ করে কমিটিকে এক মাসের মধ্যে মতামত দিতে হবে।
সরকারি সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন, নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ কিংবা স্থানীয় কোম্পানির শেয়ার কিনলে তা এফডিআই হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। তবে বিদেশিরা তাদের বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা কিংবা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পারে, যাকে বলা হয় এফডিআই আউটফ্লো। মোট এফডিআই থেকে এই আউটফ্লো বাদ দিলেই নিট এফডিআই পাওয়া যায়, যা দেশের অর্থনীতিতে প্রকৃতভাবে অবদান রাখে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে নিট এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ৩ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ, ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, এসেছে ব্যাংক খাতে।
ওই অর্থবছরে মোট এফডিআই আসে ৪২৭ কোটি ডলার, যার মধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার মুনাফা বা মূলধন হিসেবে বিদেশিরা ফেরত নিয়ে যান। ফলে নিট এফডিআই দাঁড়ায় ১২৭ কোটি ডলার, যা আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৪৬ কোটি ডলারের তুলনায় প্রায় ১৯ কোটি ডলার কম। শতাংশের হিসেবে কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ৮৬ কোটি ডলার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ এ সময়ের ব্যবধানে এফডিআই কমেছে ২৬ শতাংশ।
সরকার আশা করছে, উপযুক্ত প্রণোদনার কাঠামো তৈরি হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে টেকসই ও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।