বৈদেশিক ঋণ: প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭%

0

হাসিনা সরকার গত সাড়ে ১৫ বছরে প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পেই বেশি ঋণ নেয়, যা পরিশোধের চাপে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এদিকে ক্ষমতায় এসে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই শুরু করেছে সরকার। এতে অনেক প্রকল্পে কমে গেছে অর্থছাড়। নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক যাচাই-বাছাই চলছে।

এতে নতুন প্রকল্প অনুমোদনও কমে গেছে। যার ফলে গত কয়েক মাসে বৈদেশিক ঋণ ছাড় ও প্রতিশ্রুতি কিছুটা কমে গেছে। তবে ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির বাজেট সহায়তার অর্থ ছাড় হওয়ায় গতি পেয়েছে বৈদেশিক ঋণ ছাড়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বরে) বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঋণ ছাড় হয়েছিল ৪০৬ কোটি ডলার। 

এদিকে, ছয় মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৯৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার, যেখানে গত অর্থবছরে ১৫৬ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৪২ কোটি ডলার, যার মধ্যে শুধু আসল পরিশোধই বেড়েছে ৩১ কোটি ডলার। ছয় মাসে প্রতিশ্রুতি এসেছে মাত্র ২২৯ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৬৯৮ কোটি ডলার। বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭.১১ শতাংশ।

ঋণ শোধের বাড়তি চাপে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ঋণের বিপরীতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, যা টাকার অঙ্কে আট হাজার ৯৩৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার বা সাত হাজার ৫৬ কোটি ১২ লাখ টাকা।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার যে ঋণ পরিশোধ করেছে তার মধ্যে আসল ঋণ ১২৩ কোটি ডলার বা ১৪ হাজার ৭৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ঋণের আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল ৯২ কোটি ৬১ লাখ ডলার বা ১০ হাজার ১৮৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। সুদ-আসলসহ ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়লেও কমেছে অর্থছাড়। 

দেশের এমন ঋণখরার সময়ে সবচেয়ে বেশি ঋণের অর্থ ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি অর্থ ছাড় করেছে ১০৫ কোটি ডলারের বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক, সংস্থাটি এ সময়ে ৮০ কোটি ডলার অর্থ ছাড় করেছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ৫০ ও এডিবির ৬০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা আছে। এ সময়ে রাশিয়া দিয়েছে ৫৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এ ছাড়া জাপান ৪৪ কোটি, চীন ২৬ কোটি ৭৮ লাখ এবং ভারত সাত কোটি ২১ লাখ ডলার দিয়েছে। বাকি সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার দিয়েছে এআইআইবিসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলো।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৬৯ কোটি ১২ লাখ ডলার।

এ সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ)। সংস্থাটির কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৯১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। এ ছাড়া এডিবির কাছ থেকে ৭০ কোটি, জাপানের কাছ থেকে ২৫ কোটি ২১ লাখ, এআইআইবি থেকে ১৬ কোটি এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে ২৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

ইআরডিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত অর্থবছরে নির্বাচনের আগে অনেক প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, যার কারণে অনেক প্রকল্পে ঋণচুক্তি হয়েছিল। এতে প্রতিশ্রুতিও বেশি ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরে নতুন সরকার আসার পর অনেক যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, যার কারণে ঋণচুক্তি অনেক কম হচ্ছে। তবে সামনে শিগগিরই বাড়বে বলে তাঁরা আশা করছেন।

প্রকল্প প্রস্তুত ও কাজের অগ্রগতি না হওয়ার কারণে ঋণের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমেছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী। 

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় অর্থছাড় হয়ে থাকে কাজের অগ্রগতির ওপর। যতটুকু কাজ হয়েছে সেটির ওপরই উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড় করে থাকে। যেহেতু এই দুই মাস আন্দোলনের কারণে কাজ হয়নি, তাই ঋণের অর্থছাড়ও কম হয়েছে। কাজের অগ্রগতি বাড়লে অর্থছাড়ও বাড়বে। এটি সাময়িক।’

সৌজন্যে- কালের কণ্ঠ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here