কথায় বলে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ রুপির স্বপ্ন দেখতে নেই। আর সেই কান্ডটাই বাঁধিয়ে ফেলেছে বিশ বছরের এক যুবক। ভারতীয় ক্রিকেটের মহাতারকা বিরাট কোহলির পাঁ ছুঁয়ে রীতিমত শোরগোল ফেলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার অরামবাগের যুবক সৌভিক মুর্মু। এর পরিণাম হিসেবে বড় মূল্যও চোকাতে হয়েছে তাকে। খেলার মাঠে কোহলির পা ছুঁয়ে এখন কারাগারে আরামবাগের মধুরপুরের ওই আদিবাসী কলেজ শিক্ষার্থী। কিন্তু তাতে কি! ক্রিকেট ঈশ্বরের জন্য নিজের সেই লালিত স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা দেখিয়েছে সৌভিক মুর্মু।
রবিবার ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাঁচি স্টেডিয়ামে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলছিল। ২২ গজের ক্রিজে তখন দাপটের সঙ্গে ব্যাট করছে বিরাট। শতরানের গণ্ডি পেরিয়ে প্যাভিলিয়নের দিকে ব্যাট তুলতেই ছন্দপতন। সেই সময় নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে এক দৌঁড়ে বিরাট কোহলির পা ছুঁয়ে শুয়ে পড়ে এক যুবক। সমস্ত ক্যামেরার ফোকাশ তখন সেদিকেই। ততক্ষণে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ধরে ফেলেছেন। যদিও যুবকের মুখে স্বপ্নপূরণের অভিব্যক্তি। তবে স্বপ্নপূরণ হলেও বর্তমানে তার ঠাঁই কারাগারে।
পুলিশের পক্ষ থেকে সৌভিকের বাড়িতে ফোন আসে তার বাবা সমর মুর্মুর কাছে। এর পরই তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারেন। আর তাতেই সৌভিকের বাড়িতে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। নাওয়া খাওয়া ভুলে ছেলে কখন বাড়িতে ফিরবে সে অপেক্ষায় দিন গুনছে পরিবারের সদস্যরা।
ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে খেলা দেখতে যাওয়ার আগে সৌভিক বাড়িতে বলেছিল তার জীবনের ’ভগবান’ বিরাট কোহলি। তার স্বপ্ন সে একবার কোহলির পা ছুঁয়ে আসবে। গতকাল নিজের সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই কোহলির সেঞ্চুরির পর মাঠে নেমে পড়েন সৌভিক। তবে সে যে কাজ করেছে তা আইন বিরোধী। তাই তার এখন ঠাঁই হয়েছে রাঁচির কারাগারে।
ছোটবেলা থেকেই ২০ বছর বয়সী সৌভিকের রোল মডেল ভারতীয় ক্রিকেটের দুই সুপারস্টার বিরাট কোহলি ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। সুযোগ পেলেই ভারতের খেলা দেখতে বেরিয়ে পরে সে। গত বছরই ধোনির জন্য আইপিএল খেলা দেখতে সাইকেল চালিয়ে হুগলি থেকে চেন্নাই গিয়েছিল সৌভিক।
এই বিষয়ে সোমবার সৌভিকের বাবা সরেন মুর্মু বলেন, ‘জানি ছেলে আইনভঙ্গ করেছে। কিন্তু গর্বও হচ্ছে যে সে বিরাটকে ছুঁতে পেরেছে। ছোট থেকেই বলত পড়াশোনা ছাড়তে হয় ছাড়বে, তবু বিরাটকে একবার কাছ থেকে ছোঁবে। এর আগে একবার বিরাটের বাড়ির কাছেও চলে গিয়েছিল। সেবার দেখা পায়নি। তাই পুলিশ ছেলেকে যে শাস্তি দেবে তা মেনেই নেবেন তিনি। সৌভিকের কীর্তিতে হতবাক পাড়াপড়শিরাও।
সৌভিকের বাবা আরও জানান, রবিবার তার কাছে ফোন আসে রঁচি পুলিসের কাছ থেকে। তারা জানায় তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সৌভিকের মা মঙ্গলি সরেন মুর্মু বলেন, ছেলেকে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য উৎকণ্ঠায় রয়েছি, কিন্তু কি ভাবে ছেলে বাড়ি আসবে তা জানা নেই। ছেলে যে এই ধরনের কাজ করবে সেটা আগে থেকে জানলে ছেলেকে যেতে দিনেন না বলেও জানায় মা।

