বিরল খনিজে চীনা আধিপত্যের লাগাম কি টানতে পারবেন ট্রাম্প?

0
বিরল খনিজে চীনা আধিপত্যের লাগাম কি টানতে পারবেন ট্রাম্প?

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিশেষ করে ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) থেকে শুরু করে স্মার্টফোন ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনে অপরিহার্য বিরল খনিজগুলির ওপর চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য কমাতে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এশিয়া সফরে এসে তিনি জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার সঙ্গে বিরল খনিজ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য একের পর এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।

যদিও এই চুক্তিগুলোর সঠিক অর্থনৈতিক প্রভাব এখনই নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তবে এর মূল লক্ষ্য হলো এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর বেলায় জন্য চীনের ওপর নির্ভরতা কমানো। বেইজিং সম্প্রতি বিরল খনিজ রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার পরই ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নিল। যা স্পষ্টতই চীনকে চাপে রাখার কৌশল। এই সপ্তাহেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে এই চুক্তিগুলো আমেরিকার দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ বিরল খনিজ উত্তোলন এবং ৯০ শতাংশ প্রক্রিয়াকরণ চীনের নিয়ন্ত্রণে। এই একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণই চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে চীনকে শক্তিশালী কৌশলগত সুবিধা দিয়েছে। সম্প্রতি চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিশ্বজুড়ে সরবরাহ শৃঙ্খলের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও একটি ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছেন। যেখানে চীনের বাইরে বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা তৈরির জন্য যৌথ বিনিয়োগ ও শিল্প সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। তবে এটি হবে একটি সময়সাপেক্ষ ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। চ্যাথাম হাউসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো প্যাট্রিক শ্রোডার বলেন, চীন ছাড়া অন্য অঞ্চলে নতুন খনি, শোধনাগার এবং প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র তৈরি করতে অনেক বেশি মূলধন, কঠোর পরিবেশগত নিয়ম এবং চড়া শ্রম ও জ্বালানি খরচ হবে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশও দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করলেও, তাদের প্ল্যান্টগুলি এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি।

জাপানের সঙ্গে চুক্তিতে রেয়ার আর্থ সরবরাহ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমন্বিত বিনিয়োগ এবং মজুতকরণের পরিকল্পনার পাশাপাশি সরবরাহ সংকটের মোকাবিলায় একটি র‍্যাপিড রেসপন্স গ্রুপ গঠনের কথা রয়েছে। তবে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলি সমঝোতা স্মারক, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পালাবদলে টিকে থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এছাড়াও, পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি এখনও অমীমাংসিত। রেয়ার আর্থের প্রক্রিয়াকরণ একটি নোংরা ব্যবসা হিসাবে পরিচিত, যেখানে তেজস্ক্রিয় উপাদান তৈরি হয়। অন্য দেশগুলি তাই সহজে এই শিল্পকে গ্রহণ করেনি, যা চীনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কারণ।

চীন এখনও বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ রেয়ার আর্থ প্রক্রিয়াকরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এই ব্যবধান পূরণ করতে প্রচুর পুঁজি, পরিবেশ আইন এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন। তাই এই সহযোগিতা ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি একটি শুরু মাত্র, সামনের পথটি দীর্ঘ ও জটিল। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাবকে উপেক্ষা করাও ওয়াশিংটনের পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ এখানকার দেশগুলির জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে বাণিজ্য অত্যন্ত জরুরি।

সূত্র: বিবিসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here