বিদেশি জাতের পেঁপে চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা

0
বিদেশি জাতের পেঁপে চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা

রেড লেডি, ফাস্ট লেডি ও শাহিসহ বিদেশি ও হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলিয়েছেন বগুড়ার কৃষকরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে পেঁপের আবাদ। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় একদিকে যেমন বাম্পার ফলন হচ্ছে, অন্যদিকে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

প্রতি হেক্টর জমিতে বিদেশি ও হাইব্রিড জাতের পেঁপে ২৭ থেকে ২৮ টন পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছে। ফলে দিন দিন পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। কৃষকরা বলছেন, প্রায় সারা বছরেই পেঁপের আবাদ হয়ে থাকে। অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

জানা যায়, বগুড়ার জেলা সদর, শিবগঞ্জ, ধুনট, গাবতলী, শাজাহানপুর ও কাহালু উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। তবে শিবগঞ্জ ও ধুনট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁপের আবাদ হয়ে থাকে। দেশি জাতের পেঁপের ফলন কম হওয়ায় তারা বিদেশি ও হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। রেড লেডি, ফাস্ট লেডি ও শাহিসহ প্রায় ৯৬ ভাগ বিদেশি পেঁপে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। কৃষকরা হাইব্রিড পেঁপে চাষ করে লাভবান হওয়ার কারণ এটি উচ্চ ফলনশীল এবং দ্রুত ফলন দেয়।

এছাড়া সারা বছর ধরে ফল পাওয়া যায়। বাজারে চাহিদাও বেশি। রেড লেডি ও ফাস্ট লেডি এর মতো উন্নত হাইব্রিড জাতগুলো ভালো ফলন ও বড় আকারের ফল দেয়। যা কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে সাহায্য করে। এই চাষের মাধ্যমে কৃষকরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন এবং স্থানীয়ভাবে হাইব্রিড পেঁপে চারার উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। চারা রোপণের ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। একেকটি পেঁপের ওজন ২ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বিদেশি ও হাইব্রিড জাতের পেঁপের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮০ হেক্টর জমিতে কাঁচা ও ৬০ হেক্টর জমিতে পাঁকা পেঁপে উৎপাদন হবে। এছাড়া হাইব্রিড জাতের কাঁচা পেঁপে প্রতি হেক্টর জমিতে সাড়ে ২৭ থেকে ২৮ টন পর্যন্ত উৎপাদন হয়ে থাকে। আর পাঁকা পেঁপে প্রতি হেক্টর জমিতে ২৮ থেকে ২৯ টন পর্যন্ত উৎপাদন হয়। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলাতেও বিক্রি হয়ে থাকে। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

বগুড়া সদরের খামারকান্দি এলাকার চাষি কামাল হোসেন বাণিজ্যিকভাবে ৪ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ করে তিনি বাম্পার ফলন পেয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রথমে স্বল্প পরিসরে চাষ শুরু করেন। লাভের মুখ দেখায় পরে তিনি বড় পরিসরে পেঁপের আবাদ করেন। পেঁপে চাষে খরচ মিটিয়ে এখন লাভের মুখ দেখছেন তিনি। পাকা-কাঁচা ফলে ভরপুর তার পেঁপে বাগান। এক নজর দেখতে প্রতিদিন উৎসুক জনতা ভিড় করছে জমিতে।

তিনি আরও বলেন, তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার প্রতিটি গাছে ৫০ থেকে ১০০ কেজি পেঁপে ধরেছে। পেঁপেগুলো আকারে বেশ বড় ও আকর্ষণীয়। প্রতিটি পেঁপের ওজন ২ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত। প্রতিটি পেঁপে গাছে গোড়া থেকে ফল ধরেছে। পেঁপের ভারে গাছ ভেঙে পড়ার উপক্রম হওয়ায় অধিকাংশ গাছে বাঁশের খুঁটি দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি কাঁচা পেঁপে বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকা। এখনো জমিতে যে পরিমাণ পেঁপে আছে, তা পাকিয়ে বিক্রি করলে ৮ লাখ টাকার মতো বিক্রি করা যাবে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, জেলায় এবার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বিদেশি ও হাইব্রিড জাতের পেঁপের আবাদ হয়েছে। যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। উন্নত জাতের পেঁপে চাষ করে স্বল্পসময়ে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। পেঁপে চাষে আগ্রহী করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here