ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউবে কুকুর ও বিড়ালের অসংখ্য ভিডিও দর্শকদের বিনোদন দিলেও, সেই ভিডিওগুলোর একটি বড় অংশে পোষ্যদের শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক চাপের ঝুঁকি লুকিয়ে থাকে। সম্প্রতি ‘জার্নাল অব অ্যাপ্লাইড অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সায়েন্স’–এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষকেরা বিশ্লেষণ করেছেন ১৬২টি জনপ্রিয় ভিডিও। এগুলোতে সরাসরি নির্যাতনের দৃশ্য না থাকলেও পোষ্যদের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকির বহু প্রমাণ মিলেছে। মানুষের হাসির ভিডিও বানাতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রাণীরা নীরবে যন্ত্রণা সহ্য করছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওগুলোর ৫৩ শতাংশের বেশি পোষ্যদের আঘাতের ঝুঁকিতে ফেলেছে এবং ৮২ শতাংশ ভিডিওতে প্রাণীদের মানসিক চাপের আচরণগত লক্ষণ স্পষ্ট ছিল। বহু ভিডিওতেই পোষ্যদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভয় দেখানো, বিরক্ত করা বা অপ্রয়োজনীয় হয়রানির চিত্র দেখা গেছে।
গবেষকেরা চার ধরনের ভিডিওকে পোষ্য–কল্যাণের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রথমটি ক্ষতিকারক চ্যালেঞ্জ, যেখানে প্রাণীদের ব্যথা দেয় এমন কাজ করতে বাধ্য করা হয় বা হঠাৎ আঘাত করা হয়। দ্বিতীয়টি সংবেদনশীল পোষ্যদের লক্ষ্য করে তৈরি ভিডিও, যেখানে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আচরণ করানো হয়। তৃতীয়টি নিছক মজার জন্য তৈরি ভিডিও, যা প্রায়শই পোষ্যদের আচরণের সীমা অতিক্রম করে যায়। চতুর্থটি মানুষের মতো সাজানো বা অ্যানথ্রোপোমরফিক কনটেন্ট, যেখানে অদ্ভুত পোশাক পরানোর ফলে তাদের চলাফেরা বা শ্বাস–প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়।
ভিডিওগুলোতে পোষ্যদের চাপের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণও উপেক্ষিত থাকে। কুকুরের ক্ষেত্রে চোখ বড় করা, কান পেছনে টেনে নেওয়া, ঠোঁট চাটা বা পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা—এসব মানসিক চাপে থাকার ইঙ্গিত। বিড়ালের ক্ষেত্রে চোখের মণি বড় হওয়া, কান পেছনে চেপে যাওয়া, শরীর টানটান হয়ে থাকা—এসব স্পষ্ট ভয়ের লক্ষণ।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে দেখা যায় এমন কিছু পোষ্য—যেমন স্কটিশ ফোল্ড বিড়াল বা ফ্ল্যাট–ফেসড কুকুর—প্রজনন–সংক্রান্ত কারণে আজীবন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোগে। তবু এসব প্রাণীকে হাস্যরসাত্মক ভিডিওতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি কান কাটা, লেজ কাটা বা অতিরিক্ত স্থূলকায় পোষ্যদেরও ‘বিনোদনের উপাদান’ হিসেবে দেখানো হয়।
গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, পোষ্যদের স্বাভাবিক মাধুর্য এবং আবেগপূর্ণ উপস্থাপনা অনেক সময় তাদের কষ্টের সংকেত ঢেকে দেয়। ফলে প্রকৃত পশু–কল্যাণ সমস্যা আড়াল হয়ে যায়।
তাঁরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতি আহ্বান জানান—পোষ্যের মানসিক চাপের লক্ষণগুলো যেন সবাই চেনেন এবং এমন চ্যালেঞ্জ বা ভিডিও তৈরিতে অংশ না নেন, যা প্রাণীদের ক্ষতি করতে পারে। যদি কোনো ভিডিওতে পোষ্যদের কষ্ট বা নিগ্রহের লক্ষণ দেখা যায়, তবে সেই ভিডিও রিপোর্ট বা হাইড করা উচিত।

