বিছানায় পড়ে থাকাই বিশ্রাম নয়; জেনে নিন সঠিক উপায়

0

সপ্তাহভর কাজের চাপে ক্লান্ত শরীর ও মন। একদিন ছুটি পেলেও অনেকেই দিনটা কাটিয়ে দেন শুধু বিছানায় গড়াগড়ি করে। হয়তো মা বা সঙ্গীর তাড়নায় খাবার খাওয়া বা গোসল সেরে আবার ফিরে যান সেই পরিচিত কম্বলের নিচে। কারণ? আর কিছু করার শক্তি বা ইচ্ছেই নেই। মনে হয়, বিছানাতেই সময় কাটানো মানেই সবচেয়ে ভালো বিশ্রাম।

কিন্তু সত্যিই কি তাই? বিছানায় পড়ে থাকা মানেই কি মানসিক ও শারীরিক ‘রিচার্জ’?

এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে দুই ভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক শব্দ: ‘বেড রটিং’ এবং ‘বেড ম্যারিনেটিং’। এই দুটি অভ্যাস দেখতে প্রায় একই রকম হলেও, ভেতরের তাৎপর্য ও প্রভাব একেবারেই আলাদা।

বেড রটিং— ক্লান্তির প্রকাশ

আক্ষরিক অর্থে ‘রটিং’ মানে নষ্ট হয়ে যাওয়া। ‘বেড রটিং’-এও সেই রকমই এক ধরনের নেতিবাচকতা লুকিয়ে আছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিছানায় শুয়ে ফোন ঘাঁটা, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা, কোনো কাজ না করা, এমনকি আশপাশের জগত থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া— এসবই এর লক্ষণ।

এটি সাধারণত অবচেতনভাবে ঘটে। কেউ পরিকল্পনা করে ‘বেড রটিং’ করে না। এটি একটি ক্লান্ত শরীর ও অবসন্ন মনের প্রতিক্রিয়া। নিজের দায়-দায়িত্ব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা। কিছুক্ষণের জন্য আরাম দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি মানসিক চাপ, অপরাধবোধ, এমনকি হতাশাও বাড়াতে পারে।

বেড ম্যারিনেটিং— সচেতন বিশ্রাম

বেড রটিং আর বেড ম্যারিনেটিংয়ের মিল হল— দু’টিই বিছানায় পড়ে থাকা। তবে পার্থক্য হল, দ্বিতীয়টি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে করা হয়। প্রথমটি তা নয়। বিছানায় পড়ে থেকে নিজেকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় সচেতন ভাবে। সে ক্ষেত্রে হয়তো আপনি সারা দিন বিছানায় শুয়ে থেকে কিছু লিখলেন বা কিছু পড়লেন বা ধ্যান করলেন অথবা সমাজমাধ্যম থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে শুধু বিছানায় পড়ে থাকার আরামটাকেই প্রতি মুহূর্তে অনুভব করলেন। আর এই সব কিছুই করলেন একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য। নিখাদ বিশ্রাম।

এটি মানে অলসতা নয়, বরং নিজেকে একটু সময় দেওয়া, নিজের যত্ন নেওয়া। এতে মানসিক শক্তি ফিরে আসে, শরীরও চাঙ্গা হয়।

কোনটি বেশি উপকারী?

মুম্বাইয়ের মনোবিদ প্রিয়ংবদা তেণ্ডুলকরের মতে, বেড রটিং আসলে আমাদের ভিতরের ‘শিশু সত্তা’র প্রতিফলন, যা ক্লান্তি ও ব্যর্থতার মাঝে নিজেকে নিরর্থক ভাবতে থাকে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সুখকর নয়। অন্যদিকে, বেড ম্যারিনেটিং হলো নিজের প্রতি সদয় হওয়ার সিদ্ধান্ত। নিজের মনে বলা, ‘বিশ্রাম নেওয়া মানে আমি অলস নই, বরং নিজেকে ভালো রাখতে শিখছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেড রটিং যদি হয় মনের ফাস্ট ফুড, তবে বেড ম্যারিনেটিং হলো ঘরোয়া পুষ্টিকর খাবার— কম আকর্ষণীয় মনে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে অনেক বেশি উপকারী।’

বিশ্রাম অবশ্যই দরকার। কিন্তু সেটা কীভাবে নিচ্ছেন, তা-ই নির্ধারণ করবে আপনার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা। তাই শুধু বিছানায় পড়ে থাকলেই হবে না— বুঝে শুনে বিশ্রাম নিন, নিজেকে সময় দিন, কিন্তু সেটি হোক সচেতনভাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here