বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রীর বৈঠক, দুই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

0

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও। দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠকে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রীর কাছে কৃষি খাতে ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তা কামনা করেছেন তিনি। 

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করতে এই সহায়তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। 

শনিবার বিকালে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও-এর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন শেখ বশিরউদ্দীন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে সার, বীজ বপন, কীটনাশক ছিটানো ও ফসল নিরীক্ষণে বিপ্লব আনা সম্ভব। চীনের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বাংলাদেশের কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, ‘চীন কৃষি ও ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। বিশেষ করে স্মার্ট কৃষি ও ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমরা সহযোগিতা করতে পারি।’ 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা থাকলেও আধুনিক ফিশিং জাহাজ ও প্রযুক্তির অভাবে এই খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। 

তিনি বলেন, চীনের সহায়তায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ও প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ বাড়লে, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

ফিশিং জাহাজ ও প্রযুক্তি সহায়তা কামনা করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘সামুদ্রিক মৎস্য খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের জন্য অত্যাধুনিক ফিশিং জাহাজ ও মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি প্রয়োজন। চীনের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আমাদের এই খাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।’

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক সুবিধায় আছে। এখানে তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে শ্রমিক পাওয়া যায়। এখানকার শ্রমিকরা দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হওয়ায়, তারা দ্রুত ও ভালো কাজ করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আসুন এদেশে বিনিয়োগ করুন এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করুন।’ 

এ সময় তিনি চামড়াজাত শিল্প, হালকা প্রকৌশল,এগ্রি মেশিনারিজ ও এগ্রো টেকনোলজি, ফুড প্রসেসিং ও ঔষধ শিল্পে চীনের বিনিয়োগেরও প্রত্যাশা করেন।

চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে মৎস্য ও সমুদ্রসম্পদ খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের মৎস্য খাত ও সমুদ্র সীমার সম্পদ আহরণে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের কুটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি ইতোমধ্যে পার হয়েছে। 

দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিশেষ করে এদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে চীন সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে-যার সুফল এদেশের জনগণ ভোগ করছে।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি খাতে আরও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়। আগামী দিনে চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। 

বৈঠকে চীনের প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাইরেক্টর জেনারেল অব আউটওয়ার্ড ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ইকোনমিক কো অপারেশন, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাইরেক্টর জেনারেল অব দ্য ডিপার্টমেন্ট অব এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, কৃষি সচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য প্রসারে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও ই-কমার্স বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। 

সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও চীনের পক্ষে সে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও স্বাক্ষর করেন। 

এর আগে তিন দিনের সফরে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীর একটি দল নিয়ে শনিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছান চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও। 

সূত্র : বাসস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here