বাণিজ্যযুদ্ধ, মার্কিনবাজারে চরম অস্থিরতার ক্ষণগণনা শুরু

0

চীন থেকে অতিরিক্ত শুল্কবিহীন সর্বশেষ পণ্যবাহী জাহাজগুলো মার্কিন বন্দরে ভিড়তে শুরু করেছে। তবে আগামী সপ্তাহ নাগাদ এই পরিস্থিতি বদলে যাবে। কেননা, অতিরিক্ত শুল্কছাড়া আর কোনও পণ্য চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসবে না। আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত নতুন আরোপিত শুল্ক ছাড়াই পণ্যবাহী জাহাজগুলো মার্কিন বন্দরে ভিড়বে। 

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৯ এপ্রিলের পরে চীন থেকে যেসব জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রে ভিড়বে, সেগুলোর পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে চীন থেকে আসা জাহাজ সমুদ্রে কম থাকবে এবং সেগুলো কম পণ্য বহন করবে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির কারণে অনেক আমদানিকারকের জন্য চীনের সাথে ব্যবসা করা খুব ব্যয়বহুল হবে।

তবুও চীন এখনও আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে একটি। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিক পণ্য এবং মাইক্রোচিপের মতো সরঞ্জাম, থার্মোস্ট্যাট পণ্যগুলো চীন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে আসে।

কঠিন পরিস্থিতিতে মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির কারণে বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি মার্কিন ব্যবসায়ীরা। তারা চীনা পণ্যগুলো আগের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি চালিয়ে যাবেন, নাকি সেগুলোর বিক্রি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেবেন তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়েছেন। এর অর্থ হল- ভোক্তাদের জন্য কিছু পণ্য বাজারে পাওয়া খুবই কঠিন হবে। অথবা পাওয়া গেলেও তা খুবই ব্যয়বহুল হবে।

লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের নির্বাহী পরিচালক জিন সেরোকা বলেন, “আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা নতুন আরোপিত (২ এপ্রিল ঘোষণা) শুল্কযুক্ত পণ্যের আগমন দেখতে পাব। এই বন্দরে মোট পণ্যের প্রায় অর্ধেক আসে চীন থেকে।”

নতুন শুল্কনীতির কারণে লস অ্যাঞ্জেলেসে পণ্যের আগমন এক বছর আগের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কমে যাবে বলে জানান তিনি।

জাতীয় খুচরা বিক্রেতা ফেডারেশনের মতে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি কমপক্ষে ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন থেকে এই আমদানি হ্রাস আরও তীব্র হবে। সেখান থেকে আমদানি ৭৫ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ হ্রাস পাবে ধারণা করছে মার্কিন বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান।

জেপি মরগান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “যদি অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি সহজেই প্রতিস্থাপন না করা যায়, তবে এই মাত্রার ঘাটতি কেবল পণ্যের দামকে তীব্রভাবে বৃদ্ধিই করবে না, বরং সরবরাহ শৃঙ্খলকেও উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করবে।”

অর্থাৎ কাজ কমে যাবে, পণ্যের মূল্য চরমভাবে বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে ভোক্তাদের জন্য পছন্দের গন্ডিও কমে যাবে। এই পরিস্থিতির ক্ষণগণনা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জিন সেরোকা।

তিনি বলেন, “বড় বড় খুচরা বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের জানিয়েছেন যে, তাদের কাছে এখন আর ছয় থেকে আট সপ্তাহের পণ্য মজুদ আছে। নীতিমালা পরিবর্তন না হলে আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তা উভয়কেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

বন্দরে অলস পড়ে আছে জাহাজগুলো

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের সাংহাই বন্দরে বৃহত্তম পণ্যবাহী জাহাজগুলো অলস অবস্থায় পড়ে আছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় শিপিং কোম্পানিগুলো পণ্য পরিবহনের জন্য ছোট জাহাজ ব্যবহার শুরু করেছে। লজিস্টিক এবং ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং ব্রোকার ফ্লেক্সপোর্টের মতে, তারপরও এপ্রিল মাসে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জাহাজ চলাচল ৬০ শতাংশ কমেছে।

ফ্লেক্সপোর্টের সিইও রায়ান পিটারসন বলেন, “চীনের উপকূলে অনেক জাহাজ বসে আছে। তারা অপেক্ষা করছে এবং নতুন চুক্তির আশা করছে।”

তিনি বলেন, “যেসব কোম্পানি জাহাজ পরিচালনা করে, তারা অনেকে জাহাজেরই চলাচল বাতিল করেছে। তারা বলছে- আমরা জাহাজ অর্ধেক ভর্তি করে চালাব না, তার চেয়ে বরং এখানেই বসে থাক।” 

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মার্কিন বাজারে অস্থিরতা শুরু 

মার্কিন বন্দরে পণ্য পৌঁছানোর পর সেগুলো দোকানের তাকে পৌঁছাতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়। বর্তমান মজুদ শেষ হয়ে গেলেই ব্যয়বহুল শুল্কযুক্ত পণ্যলো তাকে পৌঁছাবে।

ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের সাপ্লাই চেইন এবং কাস্টমস নীতির ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাথন গোল্ড বলেছেন, “অনেক উদ্বেগ রয়েছে। এই মুহূর্তে খুচরা বিক্রেতারা স্কুল ও ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া অর্ডারগুলো নিয়ে পরিকল্পনা করছে। সেগুলো কীভাবে এবং কখন রাখা যায় তা নির্ধারণের চেষ্টা করছে।”

বড় খুচরা বিক্রেতারা আরও বেশি পণ্য মজুদ করতে পারলেও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য সে ধরনের সুযোগ নেই।

“বিশেষ করে যেসব ছোট খুচরা বিক্রেতার শুল্কের প্রভাব বহনের সক্ষমতা নেই, তারা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছে,” যোগ করেন জোনাথন গোল্ড।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিনিরা হাজার হাজার পণ্যের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি থেকে শুরু করে বেবি স্ট্রলার সবকিছুই আসে চীন থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের মতে, মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য যেকোনও দেশের তুলনায় চীন থেকে বেশি খেলনা, পোশাক এবং জুতা আমদানি করে থাকে।

করপোরেট গবেষণা সংস্থা গার্টনারের একটি নতুন জরিপ অনুসারে, সাপ্লাই চেইন নেতাদের ৪৫ শতাংশ আশা করছেন তারা শুল্কের কারণে বর্ধিত উচ্চমূল্য পুরোটাই গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেবেন। সূত্র: সিএনএন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here