বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা ও সেবার মান নিয়ে যখন প্রায়ই অভিযোগ উঠে সেসময় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট বিশ্বে একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের মতো বড় হাসপাতাল ও সেবার মান দেখে ভুটানের রাজা ও প্রধানমন্ত্রী অভিভূত। তারা ভুটানে এ ধরনের একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট করতে বাংলাদেশের সহযোগিতা চান। ভবিষ্যতে ভুটানে একটি বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভুটানে এ ধরনের একটি বার্ন ইউনিট করতে বাংলাদেশ কি ধরনের সহযোগিতা করতে পারে তা দেখে আসতে বলেছেন। “গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত এই ক্যাম্প পরিচালিত হয়। এ সময় বাংলাদেশের চিকিৎসক প্রতিনিধি দল ১৬টি জটিল অপারেশন সম্পন্ন করেন। প্রত্যেক রোগীই সুস্থ রয়েছেন। এছাড়া ঠোঁট কাটা, তালু কাটা ও পোড়া রোগীদের প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশি চিকিৎসকদের এই চিকিৎসাসেবার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভুটানের রাজা ও প্রধানমন্ত্রী।
কয়েক বছর আগে ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেন। সফরকালে তিনি বিশেষায়িত হাসপাতাল শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। এ সময় এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় বিস্ময় প্রকাশ করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। এরপরই এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সে দেশ সফর করার আমন্ত্রণ জানান তিনি। ওই আমন্ত্রণে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ১২ জন চিকিৎসক সে দেশ সফর করেন। সফরকালে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে আগুনে পোড়া, দুর্ঘটনায় আহত, ঠোঁট কাটা ও তালু কাটা রোগীদের প্লাস্টিক সার্জারি করেন এই চিকিৎসকরা।
ভুটানের জনগণের জন্য মানবিক সহযোগিতার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ২৭ সেপ্টেম্বর বিশেষ বৈঠক করেন দেশটির রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। একই সঙ্গে দুই দেশের জনগণের কল্যাণে স্বাস্থ্যসেবাসহ মানবিকতার সব দিক ব্যবহারের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন মাইলফলক উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজা ওয়াংচুক এই মানবিক আয়োজনের জন্য থিম্পুতে বাংলাদেশ দূতাবাস, ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায়, চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. সামন্ত লাল সেন এবং বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান।
রোটে শোরিং বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। তার ব্যাচমেট ছিলেন ডা. মামুন। বাংলাদেশ সফরের সময় শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করে তিনি বলেন, ‘এত বড় হাসপাতাল এশিয়ায় নেই।’ এই হাসপাতালে ব্যয়বহুল সার্জারি বিনামূল্যে করতে দেখেও তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসক প্রতিনিধি দলের চিকিৎসার প্রশংসা করেছেন ভুটানের রাজা ও প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা যে বর্তমান সরকারের আমলে এত উন্নত পর্যায়ে গেছে, তা তাদের ধারণার বাইরে ছিল। তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
ড. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ভুটানে বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
বাংলাদেশে প্রতি বছর আগুনে দগ্ধ হয় ১০ লাখ মানুষ। এসব রোগীর ৯৮ ভাগেরই প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন হয়। ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর ৫০০ বেডের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করা হয়। পূর্ণাঙ্গ এই হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষার সর্বোত্তম মান নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশে একজন পোড়া রোগীর প্লাস্টিক সার্জারি করতে ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
এদিকে, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আদলে আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশ্বের কোথাও নিউরোর এত বড় স্পেশালাইজড হাসপাতাল নেই। আর শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটটি এ জাতীয় ইনস্টিটিউটের মধ্যে বিশ্বে সর্ববৃহৎ।
মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটটিও বিশ্বমানের বৃহৎ একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ইএনটি ইনস্টিটিউটও আন্তর্জাতিক মানের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ হাজার বেডের সুপার স্পেশালাইডজ হাসপাতালের নির্মাণকাজ চলছে।