বরিশালে সরিষার বাম্পার ফলন, লাভের আশা কৃষকের

0

বরিশালের গ্রামীণ জনপদে এখন হলুদের সমারোহ। যতদূর চোখ যায় দেখা যাবে শুধু সরিষার আবাদ। অনাবাদী জমিতেও এবার সরিষা চাষ করেছেন কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবার ভালো ফলন ঘরে তুলে লাভের আশা করছে সরিষা চাষিরা। অনাবাদি জমিতে সরিষার ব্যাপক চাষকে তেল ফসল আবাদের বিজয় হিসেবে দেখছে বরিশাল কৃষি বিভাগ। 

৮ হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন তেলের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় এবার ১৭ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করেছেন কৃষকরা। গতবারের চেয়ে এবারে ৭৭১ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যার বেশীরভাগই ছিলো অনাবাদি জমি। স্বল্প সময়ে বাড়তি লাভ হচ্ছে বলে এ অঞ্চলের কৃষকরা তেল ফসল চাষে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।

সদর উপজেলার চরকাউয়ার কৃষক আলাউদ্দিন জানান, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) অনাবাদি জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৬ মণ সরিষা উৎপাদিত হয়। যা বিক্রি করে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন তারা। ভরা মৌসুমে সরিষার ন্যায্য মূল্য আরও লাভবান হতেন তারা। 

বাবুগঞ্জের কৃষক মো. আরিফ জানান, বাজারে সব ধরনের ভোজ্য তেলের বাজার উর্ধ্বমুখি। নিজেদের উৎপাদিত সরিষা দিয়ে পরিবারের ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্টাংশ বাজারে বিক্রি করতে পারছেন তারা। 

কৃষকরা জানান, তেল ফসল অত্যন্ত নাজুক কৃষি। এই ফসলের ফলন প্রাপ্তি নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর। সামান্য দুর্যোগেই ফসলহানির আশংকা থাকে। এবার বৃষ্টির কারণে সরিষা চাষ বিলম্বিত হওয়ায় ফলনেও বিলম্ব হচ্ছে। তাদের মতে, মৌসুমের এই সময়ে জমিতে সরিষার ফুল ঝড়ে ফল আসার কথা ছিলো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে জো (উপযুক্ত সময়) দেরিতে আসায় চাষ হয়েছে বিলম্বে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ভালো থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। 

বরিশাল জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মুরাদুল হাসান জানান, সরিষা চাষ থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করেন তারা। এখন ক্রাস মেশিন দিয়ে কৃষক ঘরে বসেই উৎপাদিত সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে। কৃষিতে সব সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় গত দুই বছরে বরিশাল জেলায় ৩ হাজার হেক্টর অনাবাদী জমিতে সরিষা চাষ বেড়েছে। এতে দেড় হাজার টন সরিষা তেলের উৎপাদন বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ উৎপাদিত সরিষা বিক্রির সুযোগও তৈরী করে দিয়েছে বলে তিনি জানান। 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শওকত ওসমান জানান, এ অঞ্চলে আগে আমন চাষের পর প্রচুর জমি অনাবাদি থাকতো। কৃষি বিভাগ অনাবাদি জমিতে তেল ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়। এ কারণে বরিশাল অঞ্চলে আগের চেয়ে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে। ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফলন ঘরে ওঠায় এ অঞ্চলের কৃষকরাও সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে ভোজ্য তেলের ঘাটতি অনেকাংশে দূর হবে বলে আশা করেন তিনি। 

বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় এবার ১৯ হাজার ৯শ’ ২৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সর্বাধিক ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে ভোলায় এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে বরিশাল জেলায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here