বগুড়ার কথিত মিনি জাফলং এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) মাত্র দুই দিনেই ভাইরাল হওয়া এই স্থানে গোসল করতে নেমে প্রাণ হারিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকাল আটটায় সেখানে আবু সাদাত ইকবাল নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এতে ভাইরাল হওয়া মিনি জাফলং-এর ভয়ংকর রূপ বেরিয়ে আসে। স্থানীয় এলাকাবাসী প্রশাসনসহ অতি উৎসাহী ইউটিউবারদের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, শেরপুর উপজেলার বেলগাছী ব্রিজকে ঘিরে কথিত মিনি জাফলং হিসেবে অতিরঞ্জিত প্রচার চালানো হলেও সেখানে লুকিয়ে থাকা মরণ ফাঁদ সম্পর্কে কেউই ন্যূনতম সতর্কতা করেননি।
জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) দ্রুত ছড়িয়ে পড়া বগুড়ার মিনি জাফলং খ্যাত এই নতুন দর্শনীয় স্থানে গোসল করতে নেমে প্রাণ হারিয়েছেন আবু সাদাত ইকবাল। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় শিল্প কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে মেশায় নদীর পানি বিষাক্তে পরিণত হয়েছে। এই বিষাক্ত পানিতে পা ভেজালেই ঘা-পাঁচড়াসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। বিষয়টি সবার জানা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো প্রচার-প্রচারণা বা সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। ফলে কথিত মিনি জাফলং-এ জলকেলিতে অংশ নেওয়া বিনোদনপ্রেমীরা ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। তাই গুজব এড়িয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামে বাঙালি নদী বয়ে গেছে। এই নদীর ওপর বেলগাছী ব্রিজ অবস্থিত। বছরখানেক আগে বাঙালি নদী খনন করায় ব্রিজের নিচে নদীর তলদেশে বালুর স্তর ও ছোট ছোট কুচি পাথর জমে। স্থানীয়ভাবে একে মিনি জাফলং বা গরিবের জাফলং বলা হয়। ঈদের এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় দুই যুবক ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তাদের ভেরিফাইড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের দিন থেকে ভ্রমণ পিপাসুদের ঢল নামে সেখানে। নদীর জলে স্নানোৎসবে মেতে ওঠেন নানা বয়সী মানুষ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিকে পুঁজি করে সেখানে অস্থায়ী খাবারের দোকান বসিয়েছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবার সকাল আটটার দিকে ধুনট উপজেলার বিলচাপড়ি গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষক ইকবাল হোসেন ও শিক্ষিকা সানজিদা পারভিন রিতা দম্পতির ছেলে সাদাত হোসেন ইকবাল ঈদের ছুটিতে নানা বাড়িতে ঘুরতে আসে। ভাইরাল হওয়া মিনি জাফলংয়ে ঘুরতে এসে জলকেলি করতে করতে ডুবে নিখোঁজ হয় শিশুটি। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় প্রায় আধা ঘণ্টা পানিতে খোঁজাখুঁজি করে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকন বলেন, নদীতে রাসায়নিক বর্জ্য মেশায় বিষাক্ত পানি ব্যবহারে মানুষের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ঘা-পাঁচড়াসহ বিভিন্ন চর্মরোগ এবং পেটের সমস্যাও হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক খান জানান, শিক্ষার্থী মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক। পাশাপাশি সেখানে যাওয়া বিনোদন প্রেমীদের সচেতনতা বাড়াতে মাইকযোগে প্রচারণা চালানোর জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।