বগুড়ায় শিমের রঙিন ফুলে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

0

উত্তরাঞ্চলের শিম আবাদে খ্যাত বগুড়া। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ ভরা মাচায় শিমের বাগানে রঙিন ফুলে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। বগুড়া জেলায় এবার ৭১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করেছেন কৃষকরা। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে রঙিন শিম ফুল। আবার ফুলের মাঝে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা সবুজ শিম। মনে হয় এ যেন প্রকৃতির নান্দনিক ফুলের বাগান। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক নজিবুল ইসলামের মাচায় ওঠা শিমের সবুজ বাগানের দৃশ্য এমনই মনোমুগ্ধকর।

জানা যায়, বগুড়া জেলার শেরপুর, ধুনট, শাজাহানপুর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, শিবগঞ্জ, কাহালুসহ অন্যান্য উপজেলার মাঠ জুড়ে শিমের আদাব শোভা পাচ্ছে। এর মধ্যে সবেেচয়ে বেশি শিমের আবাদ হয়েছে শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলায়। এই এলাকার কৃষকরা শিমের দাম ভালো পাবার আশায় প্রচুর পরিমান আবাদ করেছেন। দামও ভালো পাচ্ছেন। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত শিমের বীজ বপন মৌসুম হলেও চলতি বছর বৃষ্টির কারণে তা পিছিয়ে আশ্বিনে শুরু করতে হয়েছে। নানা প্রতিক‚লতার মাঝেও সবুজ লকলকে গাছের মাথায় শিম চাষিদের মনে আনন্দের দোল দিচ্ছে। এবার শুরু থেকেই বাজার ভালো। তবে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল চাষিদের কপালে। শত রোগবালাইয়ের মাঝেও থেমে নেই শিম গাছের পরিচর্যা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে দিন দিন শিম চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এবার শিমের ফলন বাম্পার হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

শাজাহানপুর উপজেলার শিম চাষি নজিবুল ইসলাম জানান, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। এতে জমি তৈরি, হালচাষ, রাসায়নিক সার, জৈব সার, কীটনাশক, মাচায় ও শ্রমিকের খরচসহ মোট ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে শিম বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। এবার বাজারে ভালো দামে শিম বিক্রি করছেন তিনি। শুরুর দিকে প্রতি কেজি শিম পাইকারি বাজারে ১২০-১৫০টাকা বিক্রি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত শিম আসায় প্রতি কেজি শিমের দাম ৬০-৮০টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন। আরও শিম রয়েছে বিক্রির জন্য। এই এলাকায় টেপা, চাইনিজ ও পান্টি জাতের শিমের আবাদ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, শিম বাগানে প্রতিনিয়ত কয়েকজন শ্রমিক কাজ করে এবং ২ থেকে ৩ দিন পর পর ক্ষেত হতে শিম সংগ্রহ করে বাজারজাত করি। ৪ থেকে ৫ দিন পর কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারা জমি থেকেই শিম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। 
শেরপুর উপজেলার পাইকারী ব্যবসায়ী মো. এনামুল হক জানান, জমি থেকে শিম কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। বগুড়ার শিমের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মন শিম ক্রয় করেন তিনি। 

বগুড়া কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মতলুবর রহমান জানান, বগুড়া জেলায় এবার ৭১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ হয়েছে। বিগত বছরের চেয়ে চলতি বছরে জেলায় বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে শিম। জেলার চাষিরা অন্যান্য আবাদের পাশাপাশি লাভের আশায় শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কৃষকদের নানা প্রতিক‚লতা মোকাবেলা করে ভালো ফসল বাজারে বিক্রয় করতে পারছেন। শিম চাষিদের পরামর্শ দিতে মাঠ ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা শিম চাষে ঝুঁকছেন। শিম চাষে রোগবালাই, পোকা আক্রমণে রক্ষায় বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহারসহ কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদানে মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here