দুর্লভ প্রজাতির শামুকখোল পাখি বগুড়ায় বিভিন্ন গাছের শাখায় জোড়ায় জোড়ায় সংসার পেতেছে। ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিগুলোর ডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে এলাকাগুলো। বড় বড় গাছের শাখায় বাসা বেঁধে আছে ওরা। শামুকখোল ভোরে বাসা ছেড়ে বের হয়ে উড়ে যায় আশপাশের বিলে। আর বিল থেকে ব্যাঙ, শামুক, মাছ, কাঁকড়া ও ছোট ছোট জলজ প্রাণী খেয়ে সন্ধ্যায় বাসােয় ফেরে। প্রথম দিকে সংখ্যায় কম দেখা গেলেও বংশবিস্তারে বগুড়ায় এখন কয়েক হাজার পাখি উড়ছে।
বগুড়ার কয়েকটি উপজেলায় বাসা বেঁধেছে শামুকখোল। দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। বাঁশবাগান, শিমুল, কদম, পিটাহরি, পাকুর, মেহগনিসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছে বাসা বেঁধেছে পাখিগুলো। পাখিগুলো আশপাশের বিল থেকে ব্যাঙ, শামুক, মাছ, কাঁকড়া ও ছোট ছোট জলজ প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করছে। এই পাখিগুলো ডিম দেয়, তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে নেয়। বিকালের পর গাছের চূড়ায় বসে থাকে ঝাঁক বেঁধে। পাখিগুলো দেখে একরকম বিনোদনে স্থানীয়দের দিন কেটে যায়। ছোট বড় বিভিন্ন আকারের পাখিগুলো দেখে শিশুরা আনন্দ পায়।
বগুড়া সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার, শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে অসংখ্য শামুকখোল পাখি বাসা বেঁধেছে। গ্রামটির চারপাশে রয়েছে একাধিক বড় বড় বাঁশ বাগান। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। পাশের গ্রাম দড়িপাড়া থেকে মমিনপুর ৪ কিলোমিটার, হাপুনিয়া গ্রামে রয়েছে প্রায় ৩ কিলোমিটারজুড়ে খাল। রামনগরে রয়েছে কয়েকটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বড়বড় পুকুর। রয়েছে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে আবাদের ক্ষেত। এছাড়া বাগানের মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছের চিকন মোটা ডালগুলোয় আবাসস্থল গড়ে তুলেছে শামুকখোল। এই পাখিগুলো আবার চলেও যায়। কিছুদিন পর আবার চলে আসে।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসভিত্তিক সংগঠন ‘তীর’ (টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ) এর কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শামুকখোল পাখি বিশালাকার জলচর। সাইকোনিডি গোত্রের বলে বলা হয়। সাইকোনিডিয়া গোত্রের কয়েক হাজার পাখি নিয়মিত আবাস হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিপন্ন হওয়া বড়সড় গড়নের এ প্রজাতির পাখি ঝাঁক বেঁধে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার বড়বড় বৃক্ষে আশ্রয় নিয়েছে। পাখিগুলোর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৮১ সেন্টিমিটার, ডানা ৪০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১৫ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার, লেজ ২০ সেন্টিমিটার ও পা ১৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। প্রজননকালে প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ সাদা দেখায়। এই পাখিগুলো নদী, হাওড়, বিল, বড় পুকুর, জলাশয় বা এরকম জলাভূমির পাশের বড়বড় বৃক্ষে আশ্রয় নিয়ে থাকে। শামুকখোল বিপন্ন হওয়ার পেছনে রয়েছে অতিরিক্ত গরম ও শীত এবং খাদ্য সংকট। সে কারণে পাখিগুলো মূলত বগুড়া এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে জলাশয় থেকে খাবার সংগ্রহ করতে। প্রায় ১০ হাজার শামুকখোল পাখি সংসার পেতেছে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায়। পাখির সংসার দেখতে পাখিকলোনীতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আকতার জানান, পাখিগুলোর বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হয়। পাখির কলোনীগুলো নিরাপদ যেন থাকে সে বিষয়ে কাজ করা হয়। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পাখিগুলো রক্ষায় সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। কোন শিকারি বা ক্ষতিকর কিছু হলেই উপজেলা প্রশাসনে ও থানা পুলিশে খবর দিতে বলা হয়েছে।