বগুড়ায় আড়াই কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা

0

চলতি মৌসুমে বগুড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার ৬০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বগুড়া বেসরকারিভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে মধু সংগ্রহ। এ ছাড়াও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি রবি মৌসুমে সরিষা থেকে প্রায় এক কোটি টাকার ৩০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে।

বগুড়া বিসিক সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারিভাবে মধু উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও কয়েক বছর তা বন্ধ ছিল। এরপরেও বিসিক বগুড়া নানাভাবে মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে উদ্যোক্তদের সহযোগিতা করে আসছে। চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ৬০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে বগুড়া বিসিক।

মধু উৎপাদনকারী উদ্যোক্তারা বলছেন, সরিষা চাষ মৌসুমে প্রতিটি বাক্স থেকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে আবহাওয়া অনুকূল থাকতে হয়। আগাম ও নাবী সরিষা চাষের ফলে প্রায় তিন মাস শুধু সরিষার ফুল থেকে অধিক পরিমাণ মধু সংগ্রহ হয়। সরিষার পর বরই, আম, লিচুর ফুল থেকেও মধু সংগ্রহ করা হয়। অন্যান্য ফুলের মধ্যে অন্যতম হলো সরিষা থেকে সংগৃহীত মধু। এ ছাড়া লিচু ও কালোজিরা থেকেও মধু সংগ্রহ করে মৌমাছি প্রতিপালনকারী উদ্যোক্তারা।

বগুড়া সদর, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম ও গাবতলী উপজেলায় সরিষা চাষিদের ক্ষেতের পাশে মৌ মাছির বক্স ফেলে মধু সংগ্রহ করে মৌ চাষিরা। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌ মাছির হাজার হাজার বাক্স আকারে সারি সারি করে রাখা হয়। উপজেলার বিভিন্ন মাঠের সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণ করছেন পেশাদার মৌয়ালরা। তাদের বাক্স থেকে দলে দলে উড়ে যাচ্ছে পোষা মৌমাছি। ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুল থেকে ফুলে। আর সংগ্রহ করছে মধু। মুখভর্তি মধু সংগ্রহ করে মৌ মাছিরা ফিরে যাচ্ছে মৌয়ালদের বাক্সে রাখা মৌচাকে। সেখানে সংগৃহীত মধু জমা করে আবার ফিরে যাচ্ছে সরিষার জমিতে। এভাবে দিনব্যাপী মৌ মাছিরা মধু সংগ্রহ করে থাকে।

নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডেরাহার মাঠে মৌচাষি মাহাবুবুর রহমান জানান, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। এর ওপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো হয়। এরপর বাক্সগুলো মৌমাছিতে ভরে গেলে সরিষা ক্ষেতের আশপাশের স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। সেসব বা৪ক্স থেকে সরিষা ক্ষেতে ঘুরতে থাকে মৌ মাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয় বাক্সে। পরে সেটি সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হয়।

তিনি জানান, ২০০টি বাক্স বসানো হলে প্রতি সপ্তাহে ২০০ লিটার মধু সংগ্রহ করা যায়।

মৌচাষিরা আরও জানান, সরিষা ফুলে উৎপাদিত মধুর কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। লিচুর মধু ৫০০ এবং কালোজিরা থেকে উৎপাদিত মধু বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৬০০ টাকায়। শীতকালে কালোজিরা, জ্যৈষ্ঠ মাসে তিল ও বাদাম ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। বছরের প্রায় ছ’মাস মধু সংগ্রহ করা গেলেও আষাঢ় থেকে অগ্রহায়ণ এই ছ’মাস মৌ মাছিকে বিকল্প খাবার দিতে হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, সরিষার জমি থেকে মধু সংগ্রহ করতে জেলায় ১৪২ জন উদ্যোক্তা কাজ করছেন। গত বছর সাড়ে ১৭ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ হলেও এবার ৩০ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহের ফলে ফলনও বাড়ে। বগুড়ায় এবার ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ১১২ মেট্রিক টন।

বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার ৬০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বগুড়া বেসরকারিভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নানাভাবে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাজারজাতকরণে বিসিক খাঁটি মানের নিশ্চয়তা ও বিভিন্ন মেলাতে স্টল বরাদ্দে ব্যবস্থা করে থাকে। এ ছাড়াও মধু চাষে মৌমাছি প্রতিপালন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here