একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা হয়তো ভবিষ্যতে অনেক হৃদরোগীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে বংশগত হৃদরোগে আক্রান্ত কোন রোগী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন, তা আগেভাগেই শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ বংশগত হৃদরোগের নাম হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা এইচসিএম। এই রোগ জিনগত কারণে হয় এবং পরিবারে বংশপরম্পরায় ছড়াতে পারে। এতে হৃদপেশি অস্বাভাবিকভাবে মোটা হয়ে যায়। ফলে হৃদযন্ত্র ঠিকমতো রক্ত পাম্প করতে পারে না।
এইচসিএমে আক্রান্ত অনেক মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করেন। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহ আকার নিতে পারে। হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। এখনো এই রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—কে বেশি ঝুঁকিতে আছেন, তা আগে থেকে বোঝা কঠিন।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ডসহ শীর্ষ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা প্রায় ৭০০ জন এইচসিএম রোগীর ওপর একটি গবেষণা চালান। তারা রক্তে এনটি-প্রো-বিএনপি নামের একটি প্রোটিনের মাত্রা পরিমাপ করেন। এই প্রোটিন হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক কাজ করার সময়ও নিঃসৃত হয়। তবে এর মাত্রা বেশি হলে বোঝা যায়, হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ পড়ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের রক্তে এই প্রোটিনের মাত্রা বেশি, তাদের হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল দুর্বল, দাগযুক্ত টিস্যু বেশি এবং হৃদযন্ত্রের গঠনে পরিবর্তন দেখা যায়। এসব পরিবর্তন হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ঝুঁকি বাড়ায়।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ক্যারোলিন হো বলেন, এই রক্ত পরীক্ষা চিকিৎসকদের সঠিক সময়ে সঠিক রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিতে সাহায্য করবে। এতে অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা কমবে এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীরা সময়মতো জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা পাবেন।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান অধ্যাপক ব্রায়ান উইলিয়ামস বলেন, এই পরীক্ষা ভবিষ্যতে হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ণয় ও উন্নত চিকিৎসা পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

