ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করে বহিষ্কার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

0

ফিলিস্তিনপন্থি একটি বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন একটি আদালত। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়, মাহমুদ খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের অন্যতম পরিচিত মুখ। ৩০ বছর বয়সী এই তরুণ আমেরিকার গ্রিন কার্ডধারী এবং তার বিরুদ্ধে এর আগের কোনও অপরাধের অভিযোগ নেই। গত ৮ মার্চ নিউইয়র্কে তার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত অ্যাপার্টমেন্টের লবিতে তাকে আটক করে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তারপর একদিনের মধ্যে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লুইজিয়ানার জেনা শহরের অভিবাসন ডিটেনশন সেন্টারে। তার স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক এবং তিনি শিগগিরই মা হবেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার একটি অভিবাসন আইনে মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, তার উপস্থিতি আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতিগত স্বার্থের বিরুদ্ধে।

বিবিসি জানায়, আদালতের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে খলিলের উপস্থিতি ‘পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে’। তাই তাকে দেশছাড়া করা যেতে পারে।

বিচারক জ্যামি ই. কোমানস বলেছেন, ‘সরকার পরিষ্কার ও শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেছে যে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়ানো যাবে।’ 

বিচারক মাহমুদ খলিলের আইনজীবীদেরকে আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য আগামী ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।

গ্রেফতারের দিন অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে বলেছিলেন যে ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করার জন্যই তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। খলিলের আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডার হাউট অবশ্য জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তিনি বলেন, ‘তাই এখনই কিছু হচ্ছে না।’

শুক্রবারের শুনানির শেষে খলিল বলেন, ‘আপনি আগেই বলেছিলেন, এই আদালতের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ন্যায়বিচার ও মৌলিক অধিকার। কিন্তু আজ যা দেখলাম, এই প্রক্রিয়ার কোথাও এসব ছিল না। ট্রাম্প প্রশাসন এজন্যই আমাকে আমার পরিবার থেকে হাজার মাইল দূরের এই আদালতে পাঠিয়েছে।’

আইনজীবী ভ্যান ডার হাউট বলেন, ‘আজ আমরা যা দেখলাম, সেটি ছিল ন্যায়বিচারকে তামাশায় পরিণত করার দৃশ্য। তার অধিকার যে লঙ্ঘিত হচ্ছে, তার স্পষ্ট প্রমাণ ছিল এটি। মতপ্রকাশ দমনের উদ্দেশ্যে অভিবাসন আইনের অপব্যবহার হয়েছে এখানে।’

মানবাধিকার সংগঠন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলে মন্তব্য করেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ‘প্রমাণ’ হিসাবে আদালতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি নথি জমা দেয়ার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এই রায় আসলো।অথচ সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র পাঠানো একটি চিঠি ছাড়া আর কিছু ছিল না। আর তাই পরিষ্কার করে দিচ্ছে যে, মাহমুদ খলিল কোনও অপরাধ করেননি, বরং তার বক্তব্যের কারণেই এককভাবে তাকে নিশানা করা হয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য’ এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে— যদিও মাহমুদ খলিলের কর্মকাণ্ড ‘আইনসম্মত’ ছিল।

মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা বারবার বলছেন যে, আদালতে তার মক্কেলের বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্বেষ বা সহিংসতা বিষয়ক কোনও প্রমাণ এখনও উপস্থাপন করা হয়নি। মাহমুদ খলিল অবশ্য নিউ জার্সির একটি ফেডারেল আদালতে তার গ্রেফতারকে সংবিধানবিরোধী বলে চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় জিতলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার বহিষ্কারকে ঠেকানো যেতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here