প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রয়াত মুন্নাকে সম্মাননা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের

0

৩০ বছর আগে মোনেম মুন্না খেলেছেন ভারতের বিখ্যাত ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে। সঙ্গে খেলেছেন বাংলাদেশের আরও তিন তারকা ফুটবলার শেখ মো. আসলাম, রিজভী করিম রুমি ও মো. গোলাম গাউস। তিনজনই ছিলেন ঢাকা আবাহনীর ফুটবলার। জাতীয় দলেও সুনামের সঙ্গে খেলেছেন তারা। 

২০০৫ সালে কিংবদন্তি এই ফুটবলার না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মুন্না নেই অথচ তার ক্যারিয়ারে একমাত্র বিদেশি ক্লাব ইস্টবেঙ্গল ঠিকই মনে রেখেছে তাকে। ১লা আগস্ট, মঙ্গলবার কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে প্রয়াত এই খেলোয়াড়কে। 

মোনেম মুন্নার স্ত্রী ইয়াসমিন মোনেম বলেন, এত বছর পরেও ইস্টবেঙ্গল ক্লাব যে আমাদের মনে রেখেছে। এতে আমরা খুশি। খুবই সম্মানিত বোধ করছি। আমাদের পক্ষ থেকে ক্লাবকে ধন্যবাদ। 

পুরনো স্মৃতি রোমান্থন করে তিনি বলেন, আমার বিয়ের পরই ১৯৯৩ সালে স্বামীর সাথে কলকাতায় এসেছিলাম। আমার স্বামীর সাথে বেশ কয়েকটি জায়গা ছিলাম। আমার খুব ভালো লাগে যে অন্য একটি দেশে এসে আমার স্বামী এতটা জনপ্রিয় হয়েছে।

‘আত্মজন প্রীতি’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় সাবেক খেলোয়াড় বাংলাদেশের শেখ মো. আসলাম, রিজভী করিম রুমি ও মো. গোলাম গাউসকে। রিজভী করিম রুমি উপস্থিত না থাকায় তার হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন কলকাতায় বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন এবং প্রথম সচিব (ভিসা) মো: আলমাস। এর পাশাপাশি ‘আত্মজন প্রীতি’ সম্মাননা প্রদান করা হয় বাংলাদেশের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মেহরিন মাহমুদ ও বাংলাদেশের আবাহনী ক্রীড়াচক্রের সাবেক ক্লাব সম্পাদক হারুনুর রশিদকেও। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। 

শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘ইস্টবেঙ্গলের সম্মান যাতে উপরে থাকে সেই জন্য আমরা নিজেদেরকে সম্পূর্ণ উজাড় করে দিয়ে ক্লাবের হয়ে খেলেছি। ১৯৯১ সালে পুরো ফুটবল মৌসুম আমরা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলি। কলকাতার অন্য ক্লাবও ডেকেছিল কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের খেলার।’ তার অভিমত, ‘সেই সময় খেলার যে সৌন্দর্য ছিল সেটা আজ কোথাও যেন হারিয়ে গেছে।’ 

মো. গোলাম গাউস বলেন, ‘মোহনবাগানের সাথে কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্টবেঙ্গলের একটা খেলা ছিল। সেদিন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মধ্যে এতটাই উন্মাদনা ছিল, যে আমরা হোটেল থেকে মাঠে যেতে পারছিলাম না। এখন আমরা সেই দিনগুলো খুব মিস করি। বেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সমর্থক সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যে আমাকে তারা মনে রেখেছেন। সত্যিই খুব ভালো লাগছে, এই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা নেই।’ 

এছাডাও ব্যোমকেশ বোস মেমোরিয়াল ‘জীবনকৃতি’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় সাবেক গোলরক্ষক তরুণ বোসকে। ডা. রমেশ চন্দ্র (নশা) সেন মেমোরিয়াল ‘জীবনকৃতি’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় সাবেক ক্রিকেটার অরূপ ভট্টাচার্যকে। অজয় বোস মেমোরিয়াল ‘সাংবাদিক’ সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রদীপ রায়কে। পুষ্পেন সরকার মেমোরিয়াল ‘সাংবাদিক’ সম্মাননা প্রদান করা হয় অরুন সেনগুপ্তকে। প্রতুল চক্রবর্তী মেমোরিয়াল ‘রেফারি’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় অরুনাভ দাসকে। পঙ্কজ গুপ্ত মেমোরিয়াল ‘রেফারি’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় মেহবুব হোসেনকে। বনোয়ারীলাল রায় মেমোরিয়াল ‘বছরের সেরা ফুটবলার’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় ক্লেইটন সিলভাকে। জীবন চক্রবর্তী মেমোরিয়াল ‘বছরের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের’ সম্মাননা প্রদান করা হয় ফুটবলার মহেশ সিং নাওরেমকে। গোপাল বোস মেমোরিয়াল ‘বছরের সেরা ক্রিকেট খেলোয়াড়’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় অঙ্কুর পালকে। স্বপন বল মেমোরিয়াল ‘সমর্থক’ সম্মানে সম্মানিত করা হবে সাগ্নিক ব্যানার্জি ও প্রদীপ দাসকে। 

এদিন ‘টাটা সন্স’এর চেয়ারম্যান রতন টাটাকে ‘ভারত গৌরব’ সম্মাননা প্রদান করার কথা থাকলেও, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি অনুপস্থিত থাকায় পরবর্তীতে সময় করে মুম্বাইতে গিয়ে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে তাকে। 

প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী মেহেরিন মাহমুদ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য।  

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কার্যকরী সমিতির সদস্য দেবব্রত সরকার (নীতু) বলেন, ‘ইস্টবেঙ্গল মানেই পূর্ব বাংলা, পূর্ব বাংলা মানে ইস্টবেঙ্গল। এর বাইরে কিছু নেই। 

আগামী দিনের বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে দেখা যাবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে দুই দেশের পরিস্থিতি ফিফার নিয়মাবালীর উপর।’ 

মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘এটা ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। ইস্টবেঙ্গল জিতলে আমরা আনন্দ করি, হারলে বুকে ব্যথা পাই। কিন্তু ক্লাবটা মনের মধ্যে থাকে, হৃদয়ের হৃদযয়ে থাকে। ছোটবেলা থেকেই ক্লাবের সাথে এভাবেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এটা ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাই বাংলাদেশের যে সমস্ত খেলোয়াড়রা এখানে এসে খেলে গেছেন তাদেরকে এখানে সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে তাই, তাদের সাবেক প্লেয়ারদের নিয়ে এসে এখানে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যেমন কলকাতার ক্লাবে খেলেছেন, ঠিক তেমনি ভাবে আবার কলকাতার ক্রিকেটার অরূপ ভট্টাচার্যও বাংলাদেশে গিয়ে ক্রিকেট খেলে এসেছেন। সেক্ষেত্রে দুই বাংলার মধ্যে এই আদান-প্রদান রয়েছে বলেই আমরা বলি যে আমাদের হৃদয়ে দুই বাংলা রয়েছে।’ 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here