প্রকৃতির সংস্পর্শে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটলেই মানুষের মনোযোগ ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক বারম্যান ও তার দলের গবেষণায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিক পরিবেশে ৫০ মিনিট হাঁটা সবচেয়ে বেশি উপকার দেয়, তবে মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় কাটালেও মনোযোগ এবং মানসিক শক্তি বাড়ে। বারম্যানের মতে, ‘আমাদের চারপাশের প্রকৃতি মস্তিষ্কের কার্যক্রমে সরাসরি প্রভাব ফেলে। শহর পরিকল্পনায় যদি আরও বেশি প্রাকৃতিক উপাদান যুক্ত করা যায়, তাহলে মানুষের সার্বিক মানসিক কল্যাণ বাড়বে।’
বারম্যানের গবেষণা নির্ভর করেছে ‘অ্যাটেনশন রিস্টোরেশন থিওরি’ (Attention Restoration Theory)-এর ওপর।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষের মনোযোগ দুইভাবে কাজ করে—
- ডাইরেক্টেড অ্যাটেনশন (নির্দেশিত মনোযোগ), যেখানে ব্যক্তি নিজেই নির্ধারণ করেন কোন বিষয়ে মনোযোগ দেবেন।
- ইনভলান্টারি অ্যাটেনশন (অনিচ্ছাকৃত মনোযোগ), যেখানে পরিবেশের কোনো উদ্দীপক (যেমন আলো, শব্দ বা দৃশ্য) স্বতঃস্ফূর্তভাবে মনোযোগ টেনে নেয়।
বারম্যান বলেন, ‘নির্দেশিত মনোযোগ দীর্ঘসময় ধরে রাখলে মানসিক ক্লান্তি আসে। কিন্তু প্রকৃতি এমন এক পরিবেশ দেয়, যা মনকে স্বাভাবিকভাবে বিশ্রাম দেয় এবং নতুন করে মনোযোগ ফিরিয়ে আনে।’
তিনি উদাহরণ দেন ‘জলপ্রপাতের দিকে তাকিয়ে থাকলে তা আপনার মনোযোগ পুরোপুরি দখল করে না, বরং একে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।’
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও প্রকৃতির মাঝে সময় কাটিয়ে মানসিকভাবে বেশি উপকৃত হন।
বারম্যান বলেন, ‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, প্রকৃতিতে হাঁটলে তাদের নেতিবাচক চিন্তা আরও বেড়ে যাবে। কিন্তু ফলাফল উল্টো। প্রকৃতি তাদের মনোযোগ পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেছে।’
আরও এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির সংস্পর্শে মানুষ কম আত্মকেন্দ্রিক হয়, নিজেকে বৃহত্তর কিছুর অংশ হিসেবে অনুভব করে এবং অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা বাড়ে।
এমনকি ঘরের ভেতরের গাছপালাও মানসিক প্রশান্তি ও মানবিক সংযোগ বৃদ্ধি করতে পারে।
বারম্যানের মতে, ‘প্রকৃতি শুধু ভালো অনুভূতি দেয় না, বরং আমাদের মানবিক সম্পর্ক ও সমাজবোধকে শক্তিশালী করে তোলে।’
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নি পোস্ট

