পোলিও মুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন কতোদূর?

0
পোলিও মুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন কতোদূর?

বিল গেটসসহ আন্তর্জাতিক সমাজসেবীরা পোলিও নির্মূলের প্রচেষ্টায় ১.৯ বিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) নতুন তহবিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু উচ্চ-আয়ের দেশগুলোর বৈদেশিক সাহায্য কমানোর ফলে এই বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এখনো বড় আকারের আর্থিক ঘাটতি থেকে গেছে।

আবু ধাবিতে অনুষ্ঠিত এই অঙ্গীকার অনুষ্ঠানের পর গ্লোবাল পোলিও নির্মূল উদ্যোগ থেকে জানানো হয়, ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের ঘাটতি বর্তমানে ৪৪০ মিলিয়ন ডলার।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, গেটস ফাউন্ডেশন, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, ইউনিসেফ এবং ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গাভির নেতৃত্বে এই বেসরকারি-সরকারি অংশীদারিত্বের লক্ষ্য হলো ২০২৯ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে পোলিও সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা। উচ্চ-আয়ের দেশগুলোর সরকারি উন্নয়ন সহায়তা তীব্রভাবে কমে যাওয়ায় গত অক্টোবরে এই উদ্যোগ আগামী বছরে ৩০ শতাংশ বাজেট হ্রাস দেখতে চলেছে বলে জানানো হয়েছিল।

জিপিইআইর মুখপাত্র অ্যালি রজার্স সিএনএনকে বলেন, যে ঘাটতিটি অবশিষ্ট রয়েছে, তা মূলত ঐতিহ্যবাহী দাতাদের মধ্যে রেষারেষির কারণে হয়েছে। তিনি সতর্ক করে দেন, জিপিইআইর কৌশল সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ৬.৯ বিলিয়ন ডলার পুরোপুরি না পেলে এবং একটি পোলিও-মুক্ত বিশ্বের প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গীকার বজায় না থাকলে শিশুরা পোলিও থেকে অরক্ষিত থাকবে এবং নির্মূলের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো দাতা দেশগুলোও ২০২৬ সালের জন্য তাদের তহবিল কমিয়েছে। এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন এই বছরের শুরুর দিকে গাভির জন্য তহবিল বন্ধ করে দেয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসে। তবে, পোলিও প্রতিরোধের লড়াইয়ের জন্য মার্কিন কংগ্রেসে দ্বিদলীয় সমর্থন অব্যাহত রয়েছে।

এই ১.৯ বিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রতি বছর প্রায় ৩৭ কোটি শিশুকে পোলিও টিকা দেওয়ার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। 

ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেইয়াসুস এক বিবৃতিতে সকল দেশ ও দাতাদের এখনই এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা পোলিও নির্মূলের দ্বারপ্রান্তে এবং মানবতার জন্য একটি ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করতে চলেছি।

এই উদ্যোগে মুহাম্মদ বিন জায়েদ ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটি, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এবং ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের পাশাপাশি পাকিস্তান, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও লুক্সেমবার্গের সরকার অর্থ প্রদান করেছে। সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার, ১.২ বিলিয়ন ডলার, এসেছে গেটস ফাউন্ডেশন থেকে।

পোলিওভাইরাস একবার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটালে তা পক্ষাঘাত এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশী অচল হয়ে মৃত্যুও ঘটাতে পারে। বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচির আগে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি শিশু পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতো। এখন শুধু দুটি দেশে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে পোলিওভাইরাস স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে, ১৯টি অন্যান্য দেশে ভ্যারিয়েন্ট পোলিওভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা এখনো রয়েছে।

গেটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিল গেটস বলেন, পোলিও শেষ করার লড়াই দেখায় যে বিশ্ব একটি অভিন্ন লক্ষ্যের জন্য একসাথে বিনিয়োগ করলে কী সম্ভব। আমরা ৯৯.৯ শতাংশ পথে এসেছি কিন্তু শেষ মাইলটুকুর জন্য আমাদের সেই একই সংকল্পের প্রয়োজন, যা আমাদের এতদূর নিয়ে এসেছে। তিনি আরও যোগ করেন, এই নতুন তহবিল আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে এবং শিশুদের এই ভয়াবহ রোগ থেকে চিরতরে রক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

সূত্র: সিএনএন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here