পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ বা অর্থায়ন নিয়ে নতুন বিধিমালা জারি করেছে সরকার। ‘মার্জিন রুলস, ২০২৫’ ও ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (মার্জিন) বিধিমালা, ২০২৫’ শিরোনামে এই বিধিমালা এই মাসে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো বিনিয়োগকারী নিজস্ব মূলধনের বেশি পরিমাণে মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন না। অর্থাৎ গ্রাহকের ইকুইটির সমপরিমাণ ঋণই সর্বোচ্চ সীমা।
পাশাপাশি পোর্টফোলিওর মান ৭৫ শতাংশে নেমে এলে ঋণগ্রহীতাকে ‘মার্জিন কল’ করা হবে। আর পোর্টফোলিওর মান ৫০ শতাংশের নিচে নামলেই বিনা নোটিশে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রি (ফোর্স সেল) করতে পারবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো বিনিয়োগকারীর ন্যূনতম ইকুইটি পাঁচ লাখ টাকা থাকতে হবে। গত এক বছরে গড়েও এই পরিমাণ বিনিয়োগ থাকা বাধ্যতামূলক।
একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন, তবে তা ঋণদাতার প্রকৃত মূলধন বা নিট সম্পদের ১৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। যাঁদের বিনিয়োগ পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে, তাঁরা ইকুইটির অর্ধেক পরিমাণ মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন। আর ১০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা তাঁদের ইকুইটির সমপরিমাণ ঋণ পাবেন।
বিধিমালায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রী, গৃহিণী ও সাধারণ অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন না। তবে অসচ্ছল ও অবসরপ্রাপ্ত বিনিয়োগকারীরা এই সুবিধা পাবেন।
শুধু ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার এবং কমপক্ষে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানকারী ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ারেই মার্জিন ঋণ পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে কেনা শেয়ার বিক্রি করে নগদায়ন না করলে নতুন ঋণও পাওয়া যাবে না।
বাজারের সার্বিক মূল্য-আয় অনুপাত যদি ২০-এর বেশি হয়, তাহলে স্টক এক্সচেঞ্জকে ওয়েবসাইটে সতর্কতা জারি করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের ইকুইটির অর্ধেকের বেশি মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন না।
লাইফ ইনস্যুরেন্স কম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে ইকুইটি ও মার্জিন অর্থায়নের অনুপাত হবে ১:০.২৫। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা ঋণ নেওয়া যাবে। তবে এর শর্ত হলো—সংশ্লিষ্ট বীমা কম্পানিকে তাদের অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওর মূল্য ৭৫ শতাংশে নেমে এলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ‘মার্জিন কল’ করবে। এর পরও সমন্বয় না হলে এবং মূল্য ৫০ শতাংশের নিচে নামলে ঋণদাতা কোনো নোটিশ ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করে ঋণ উদ্ধার করতে পারবে।
মার্জিন ঋণের বিপরীতে প্রতি তিন মাসে সুদ নগদে বা শেয়ার বিক্রি করে পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় ঋণদাতা নিজেই শেয়ার বিক্রি করে সুদ আদায় করতে পারবে।
প্রত্যেক মার্জিন অ্যাকাউন্টের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ এক বছর, নবায়ন না হলে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে সমন্বয় করতে হবে।

