পায়ুপথে তীব্র ব্যথা হলে

0
পায়ুপথে তীব্র ব্যথা হলে

আজ আমরা কথা বলব পায়ুপথের একটি বেদনাদায়ক রোগ, পেরি এনাল অ্যাবসেস বা ফোড়া নিয়ে। যেটাকে প্রচলিত ভাষায় গোদ ফোড়া বলা যেতে পারে, অর্থাৎ পায়ুপথে ফোড়া। দেখা যায় যে পায়ুপথের আশপাশে কোনো একটা জায়গায় অথবা কখনো কখনো ভিতরে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। প্রচ- ব্যথা, ব্যথার সঙ্গে জ্বর এবং ম্যালেইজ, অর্থাৎ শরীরের মেজমেজ করা ইত্যাদি শুরু হয়। তারপর এক সময় দেখা যায়, পায়ুপথের কোনো একটা জায়গা ফুলে গেছে। তখন এর চিকিৎসা করতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা-টি হচ্ছে অপারেশন। অর্থাৎ যেহেতু এটা একটা ফোড়া, সেই ফোড়াটি অবশ্যই কেটে এর ভিতর থেকে পুঁজ, পানি, রক্ত, রস ইত্যাদি বের করে দিতে হবে। দিলেই কিন্তু রোগী ব্যথার উপশম হবে। এটি সাধারণত ইমার্জেন্সি বেসিসে করা হয়, জরুরি ভিত্তিতে। এটা কেটে দিলে ভিতরের পুঁজ-পানি বের করা হয়, তারপর সেখানে গজ দিয়ে একটা ড্রেসিং করতে হয় রেগুলার, গরম পানিতে বসতে হয়, তারপর আস্তে আস্তে সেটি ভালো হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে, অর্থাৎ প্রায় ৬০ থেকে ৭০% ক্ষেত্রে, এই ফোড়াটি আরেকটা রোগে রূপান্তরিত হয়, যাকে বলা হয় ফিস্টুলা। ফিস্টুলা-ইন-অ্যানো।

অর্থাৎ এই ফোড়াটা একচুয়ালি এসেছে পায়ুপথের ভিতর থেকে। ভিতর থেকে আসার সময় সে একটা নালি তৈরি করে। যার ফলে বাইরে এটি কেটে দিলেও ফোড়াটা ভালো হয়ে যায়, কিন্তু ভিতরের সঙ্গে নালির কানেকশনটা থাকে। তখন ওই মুখ দিয়ে, যে ফোড়ার মুখটা ছিল, সেটা দিয়ে পুঁজ, পানি, রক্ত, রস ইত্যাদি বের হতে থাকে। সুতরাং তখন এটা দ্বিতীয় আরেকটি অপারেশন করতে হয়। রোগীর সব সময় এটি মাথায় রাখতে হবে যে, এই  ফোড়াটি ফিস্টুলায় রূপান্তরিত হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ফোড়া বাইরে কোনো জায়গায় ফোলে না। এটা ভিতরে রেক্টামের মধ্যে ফুলে যায়। তখন খুব জটিল পরিস্থিতি হয়। কারণ ডাক্তার বাইরে হাত দিয়ে বা পরীক্ষা করে কোথাও পান না যে কোনো জায়গায় ফোড়া আছে। কিন্তু রোগীর ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি টেম্পারেচার অনেক রকম থাকে। খেয়াল করতে হবে, এটা ইন্ট্রারেক্টাল অর্থাৎ পায়ুপথের ভিতরের কোনো ফোড়া কিনা। যেটাকে আমরা ইন্ট্রারেক্টাল ফোড়া বলি। সে ক্ষেত্রে সেটারও অপারেশন করতে হবে পায়ুপথের ভিতরে এটা কেটে। তো সুতরাং এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। যখন এই ফোড়াটা খুঁজে পাওয়া যায় না কিন্তু লক্ষণগুলো ফোড়ার থাকে, তখন কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এটি ডায়াগনোসিস করা যেতে পারে। এর বেস্ট পরীক্ষাটা হচ্ছে এমআরআই। এমআরআই অব দি অ্যানাল ক্যানেল। অর্থাৎ পায়ুপথের আশপাশের এবং পেলভিসের আমরা যদি এমআরআই করি তাহলে এই ফোড়াটা ধরা যেতে পারে বা ডায়াগনোসিস করা যেতে পারে। আরেকটি পরীক্ষার মাধ্যমে এটি ডায়াগনোসিস করা যেতে পারে, সেটা হচ্ছে ইন্ট্রারেক্টাল আলট্রাসনোগ্রাম। অর্থাৎ পায়ুপথের ভিতরে আলট্রাসনোগ্রাম করলে আমরা কিন্তু এই ফোড়াটা পরিষ্কার দেখতে পারি।

-অধ্যাপক ডা. এস এম এ এরফান

কোলোরেক্টাল সার্জন, ডা. এরফান

কোলোরেক্টাল সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here