প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ সংরক্ষণে প্রশাসনিক অভিযানের মধ্যেও পটুয়াখালীর দুমকিতে চলছে ইলিশ শিকারের মহোৎসব। জনবল স্বল্পতা আর যানবাহন সংকটে দায়সারা অভিযান এড়িয়ে পায়রা, পাতাবুনিয়া ও লোহালিয়া নদীতে দিনে-রাতে সমান তালে চলছে ইলিশ শিকার। উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সমন্বয়হীনতায় পরিবারের ছোট ছোট শিশু-কিশোর সন্তানদের ব্যবহার করে জেলেরা দেদারছে শিকার করছে মা-ইলিশ। দুর্বল ডিজেল ইঞ্জিনের ট্রলারে উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কৌশলী জেলেরা ইলিশ শিকারের উৎসবে মেতে ওঠেছে। অবরোধের ২/৩ দিন পরেই পায়রা, পাতাবুনিয়া ও লোহালিয়া নদীর তীরবর্তি জেলেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চললেও তাদের ঠেকাতে পারছে না প্রশাসন। প্রশাসন অবশ্য অভিযোগটি মানতে নারাজ। তাদের দাবি অভিযান মোটামুটি সফল হচ্ছে। মৎস্য বিভাগের নিয়মিত অভিযানে এ পর্যন্ত ৩টি নৌকা ও ১৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল আটক হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার পাংগাশিয়া, আঙ্গারিয়া, লেবুখালী ও মুরাদিয়া ইউনিয়ন বেষ্টিত পায়রা, পাতাবুনিয়া ও লোহালিয়া নদীর অন্তত ১১টি পয়েন্টে জেলেরা দিনে রাতে সমান তালে ইলিশ শিকার করছে। কম সময়ে বেশি ইলিশ ধরা পরায় প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই (১২ অক্টোবর) নানান কৌশলের আশ্রয় নিয়ে নদীতে মা-ইলিশ শিকারে নামছে। নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না কেউ। মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের বিশেষ অভিযানের গতিবিধি লক্ষ্য রেখেই ওইসব জেলেরা নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে ইলিশ শিকার করছে।
সূত্রটি আরও জানায়, চলতি মৌসুমে টনকে টন ইলিশ ধরা পরলেও তা বাজারজাত হচ্ছে না। নির্দিষ্ট কয়েকজন পাইকার বিভিন্ন ঘাটে গোপনে মাছগুলো কিনে নিয়ে মওজুদ করে রাখছে। অবরোধের পরে তা বাজারে তোলা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার হাজিরহাট, লেবুখালী ফেরীঘাট, ভাঙ্গার মাথা, আঙারিয়া বন্দর, পাতাবুনিয়ার হাট, জেলেপাড়া, উত্তর মুরাদিয়া ও জোয়ারগরবদিসহ অন্তত ১১টি ঘাটে পাইকারদের গোপনীয় আস্তানায় ককশেড ভর্তি করে ইলিশ মাছ মওজুদ রাখা হচ্ছে। দিনের বেলায় কোথাও ইলিশের চিহ্নমাত্র দেখা না গেলেও প্রতিদিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পর পরই নৌকা-জাল গুটিয়ে সারারাতের আহরিত ইলিশ বস্তায় ভর্তি করে জেলেরা যে যার মতো সটকে পড়ছে। একদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিশেষ অভিযান চলছে অন্য দিকে এখানের নদ-নদীতে দেদারছে ইলিশ শিকারও অব্যাহত আছে।
ইলিশ শিকার বন্ধের প্রশ্নে আঙ্গারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম মর্তুজা বলেন, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, কিছু জেলেরা নির্দেশ মানলেও মৌসুমি জেলেরা কথা শুনছে না। তার পরেও আমরা প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকার বন্ধে নৌকা জাল আটক রাখলেও তারা (জেলে) বিকল্প নৌকা জাল নিয়ে চুরি করে নদীতে নামছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, নিয়মিত অভিযানে (১২ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত) ৩টি নৌকাসহ ১৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো: নুরুল ইসলাম জনবল, বাজেট স্বল্পতা ও দ্রতযান সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা আমাদের সীমিত শক্তি দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আল-ইমরান বলেন, নদীতে অভিযানকালে তেমন একটা নৌকা-জাল পাচ্ছি না। দু’একটা জেলে নৌকা দেখলেও তাদের ধরা খুবই কস্টসাধ্য। এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করলে শতভাগই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।