পানিতে ভাসছে ‘সোনার ফসল’ পানিফল, আয়ের মুখ দেখছেন কৃষকরা

0
পানিতে ভাসছে ‘সোনার ফসল’ পানিফল, আয়ের মুখ দেখছেন কৃষকরা

বগুড়ার খাল-বিল এবং জলাবদ্ধ জমিতে ভাসছে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর পানিফল। সহজ চাষাবাদ, স্বল্প খরচে বেশি লাভ—এই তিন উপাদানের কারণে পানিফল এখন স্থানীয় কৃষকদের কাছে ‘সোনার ফসল’ হিসেবে পরিচিত। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে এ জলজ ফল। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ—সব বয়সীর কাছেই জনপ্রিয় হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি।

গ্রামবাংলার একসময়ের অবহেলিত এই ফল দেখতে কিছুটা শিঙাড়ার মতো হওয়ায় স্থানীয়ভাবে ‘সিঙাড়া’ নামেও পরিচিত। সাধারণত শীতের শুরুতে বাজারে উঠলেও এখন আগাম চাষ হচ্ছে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পূর্বে দোবিলা বিলে স্থানীয় চাষিরা ব্যাপকভাবে পানিফল উৎপাদন করছেন। পাশাপাশি গাবতলী, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলাতেও পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে পতিত ও নিচু জমিতে এ চাষ ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত।

স্বল্প খরচে ভালো আয়ের আশায় কৃষকদের মাঝে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে পানিফল চাষে। এর সঙ্গে বাজারে দামও অনুকূলে থাকায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

বর্ষজীবী এই জলজ উদ্ভিদের গাছ পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। শিকড় পানির নিচে জমিতে গেঁথে থাকে, আর পাতাগুলো ভেসে থাকে পানির ওপরে। গোলাকার পাতাগুলোর নিচেই লুকিয়ে থাকে ত্রিকোণ আকৃতির পানিফল। ডোবা, খাল, পুকুর—স্বল্প পানিযুক্ত জলাশয়েই সহজে চাষ করা যায়। আষাঢ় মাসে পানি জমতেই চারা ছেড়ে দেওয়া হয়, আর তিন মাস পর—ভাদ্র থেকে—ফল আসা শুরু হয়। প্রতি গাছ থেকে তিন-চার দফা ফল সংগ্রহ করা যায় এবং পৌষ মাস বা ডিসেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এ ফলের আলাদা বীজ নেই; মৌসুম শেষে পরিপক্ব ফল থেকেই চারা জন্মায় এবং পরের মৌসুমে তা ব্যবহার করা হয়।

কৃষকরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পানিফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১৭–২০ মণ ফল ধরছে। বিঘাপ্রতি খরচ হয় ৬–৭ হাজার টাকা। প্রতি মণ পানিফল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে দাম আরও ভালো থাকে।

বগুড়া সদরের সামগ্রাম দক্ষিণপাড়ার চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, পাঁচজন মিলে তারা দোবিলা বিলে ১৪ বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৫৫–৬০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘এক থেকে দেড় মাসেই দুই লাখ টাকার বেশি ফল বিক্রি করতে পারব। প্রতিদিন ৮–১০ মণ করে পানি ফল বাজারে দিচ্ছি। পাইকারি দর ৭০০–৮০০ টাকা মণ।’

চাষিদের মতে, শ্রম ও খরচ কম, পরিচর্যাও সহজ—তাই লাভ বেশি। শহর-গ্রাম—সবখানেই এর ভালো চাহিদা রয়েছে। সেদ্ধ করেও এ ফল খাওয়া যায়।

এদিকে, বগুড়ার বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পানিফল ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় অনেকেই পরিবারের জন্য কিনছেন।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর জেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে, উৎপাদন হবে প্রায় ৯০০ মেট্রিক টন। গত বছর ছিল ৩০ হেক্টর—অর্থাৎ এবার ৫ হেক্টর বেশি। বর্তমানে জেলায় বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ বাড়ছে। বগুড়ায় সারা বছর কিছু জমিতে হাঁটুসমান পানি থাকে, ফলে শীত এলেই পানিফল চাষ ব্যস্ততা শুরু হয়।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম ফরিদ বলেন, পানিফল চাষে কষ্ট কম, ব্যবহৃত কীটনাশক ও সারও কম লাগে। তাই এটি পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে যা স্বাস্থ্যকর। কৃষকদের আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি যেন তারা বাণিজ্যিকভাবে পানিফল আবাদ করে লাভবান হতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here