গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত নাম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ। এখানেই মঙ্গলবার যাত্রীবোঝাই জাফর এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন অপহরণ করেছে বেলুচ বিদ্রোহীরা।
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চেষ্টায় ১৫৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে চলছে পাকিস্তানি সেনাদের গুলির লড়াই। এতে ২৭ জঙ্গিও নিহত হয়েছে।
তবে এবারই প্রথম নয়। অতীতেও বারবার জাফর এক্সপ্রেসকে নিশানা বানিয়েছে বেলুচ বিদ্রোহীরা। প্রশ্ন উঠছে, কেন বারবার জাফর এক্সপ্রেসকেই নিশানা করে তারা?
২০১৮, ২০১৩, ২০২৪— প্রতিবারই প্রায় একই কায়দায় বেলুচ বিদ্রোহী গোষ্ঠী জাফর এক্সপ্রেসকে নিশানা করেছে। এই এক্সপ্রেসে হামলা চালিয়েছে। কখনও তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে, কখনও তারা ব্যর্থ। তবে তারপরও জাফর এক্সপ্রেসই হয়ে উঠেছে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিশানা!
২০১৮ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবগামী এই এক্সপ্রেসে নাশকতার ছক কষেছিল সশস্ত্র বেলুচ গোষ্ঠী বিএলএ (বালুচ লিবারেশন আর্মি)-র বিদ্রোহীরা। কিন্তু সেই হামলায় অল্পের জন্য রক্ষা পায় ট্রেনটি। লাইনের উপর বিস্ফোরক রেখে ট্রেনটিকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তারা। সেই বিস্ফোরক রিমোট দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। তবে সময়ের হেরফেরে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিল জাফর এক্সপ্রেস। তখন ট্রেনের ২০০ ফুট দূরে রেললাইনে বিস্ফোরণ হয়।
বেলুচ বিদ্রোহী ছাড়াও টিটিপি (তেহরিক-ই-তালিবান)-এর জঙ্গিদেরও নিশানায় থাকে জাফর এক্সপ্রেস! মঙ্গলবারের হামলা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০২৩ সালে দু’বার জাফর এক্সপ্রেসে একই স্থানে দু’মাসের ব্যবধানে হামলার ঘটনা ঘটে। সেই বছর ১৯ জানুয়ারি সেই বেলুচিস্তানের বোলানেই সন্ত্রাসীরা নিশানা করেছিল ট্রেনটিকে। সেটি লাইনচ্যুত হওয়ার পর বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় অন্তত ১৩ জন আহত হয়। ওই ঘটনার এক মাস পর আবার বোলানেই জাফর এক্সপ্রেসকে নিশানা করে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারগামী ওই এক্সপ্রেসে হামলা চালানো হয়। মৃত্যু হয় একজনের, আহত হয় অন্তত ১২ জন। শুধু জাফর এক্সপ্রেস নয়, গত বছর কোয়েটা স্টেশনেও প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়। ৪০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়।
জাফর এক্সপ্রেসে সাধারণ যাত্রীর পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা এই ট্রেন যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন। গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্রোহীরা বেলুচিস্তানে গেরিলা কৌশলের উপর নির্ভর করে নানা সময়ে নানা ‘বিদ্রোহে’র ঘটনা ঘটায়।
শুধু ট্রেন নয়, সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির নিশানায় থাকে যাত্রিবাহী বাসও। তাদের কৌশল পরিবর্তনের পর প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালের আগস্টে। চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে যাওয়া এক বাসে আত্মঘাতী হামলা চালায় তারা। ২০১৮ সালের পর থেকে গোয়েদর, করাচি, তুরবাত, বোলানের মতো এলাকায় ১০টিরও বেশি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছে তারা।
গত অক্টোবরে মাজিদ ব্রিগেড (২০১০ সালে কোয়েটায় পাক সেনার হাতে নিহত বিএলএ কমান্ডরের নামে তৈরি গোষ্ঠী) করাচি বিমানবন্দরের কাছে আত্মঘাতী হামলা চালায়। চীন থেকে আগত ইঞ্জিনিয়ার এবং বিনিয়োগকারীদের একটি কনভয়কে তারা লক্ষ্যবস্তু বানায়। বিস্ফোরকবোঝাই একটি গাড়ি ঢুকে পড়ে ওই কনভয়ে। সেই বিস্ফোরণে চীনা নাগরিক এবং তাদের নিরাপত্তাকর্মী-সহ কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়। সূত্র: আল-জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ইকোনমিক টাইমস