পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘বাস্তব ও ন্যায্য’ চুক্তি চায় ইরান

0

ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘বাস্তব এবং ন্যায্য’ চুক্তি চায়। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনার আগে আপস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং জোর দিয়ে বলছে, তেহরানের পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে না।

শনিবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইরান যদি তা প্রত্যাখ্যান করে তবে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তার কয়েক সপ্তাহ পরেই ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠালে শনিবার ওমানে দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষরা বৈঠকে বসতে চলেছে।

খামেনির উপদেষ্টা আলী শামখানি এক্স-এক পোস্টে বলেছেন, ‘কেবল মাত্র ক্যামেরার সামনে কথা বলা এবং প্রদর্শন করা তো দূরের কথা, তেহরান একটি ‘বাস্তব ও ন্যায্য’ চুক্তির চেষ্টা করছে। আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব প্রস্তুত।’ 

তিনি নিশ্চিত করেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ‘আমেরিকার সাথে পরোক্ষ আলোচনার জন্য পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে’ ওমান যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেছেন, ওয়াশিংটন যদি সদিচ্ছা দেখায়, তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ ‘মসৃণ’ হবে।

ট্রাম্প তার রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের আরাঘচির সাথে দেখা করার কয়েক ঘণ্টা আগে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেছেন, আলোচনার আগে ট্রাম্প ইরানের পরমাণু অস্ত্র মজুতের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি চাই ইরান একটি চমৎকার, মহান, সুখী দেশ হোক। কিন্তু তাদের পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারবে না।’

ট্রাম্পের বন্ধু এবং বিশ্ব ভ্রমণকারী দূত উইটকফ আলোচনার আগে নমনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।

উইটকফ‘ দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’কে বলেছেন, ‘আমাদের আজকের অবস্থান’ শুরু হয় ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করার দাবি দিয়ে। এদিকে ট্রাম্পের চারপাশে কট্টরপন্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি যা খুব কম লোকই আশা করেছে, ইরান কখনো মেনে নিবে না।’

উইটকফ সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘এর মানে এই নয় যে, প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা দুই দেশের মধ্যে আপস করার অন্য কোনো উপায় খুঁজে বের করব না।’

তিনি আরও বলেছেন,  ‘যেখানে আমাদের লাল রেখা থাকবে, সেখানে তোমাদের পরমাণু সক্ষমতার অস্ত্রায়ন থাকতে পারে না।’

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৫ সালে একটি চুক্তিতে আলোচনা করেছিলেন, যা ইরানকে তার বিতর্কিত কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার ওপর জোর না দিয়ে পরমাণু অস্ত্র মজুত থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিল।

ট্রাম্প চুক্তিটিকে অত্যন্ত দুর্বল বলে নিন্দা করেছেন এবং প্রথমবার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি বাতিল করেন। পরিবর্তে ইরানের তেল খাতের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

তেহরান এক বছর ধরে চুক্তিটি মেনে চলে এবং তারপর নিজস্ব প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে।আলোচনার আগে, ট্রাম্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তারা ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপ ‘সম্পূর্ণরূপে’ সম্ভব।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান বলেছে, তেহরান জাতিসংঘের পরমাণু পরিদর্শকদের বহিষ্কার করতে পারে। যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়েছে, এটি ‘ক্রমশ তীব্র’ হবে।

ইরান ধারাবাহিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র মজুতের চেষ্টা অস্বীকার করে আসছে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেছেন, ইরান ‘সরল বিশ্বাস এবং পূর্ণ সতর্কতার সাথে কূটনীতিকে একটি প্রকৃত সুযোগ দিচ্ছে।’

তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করা উচিত, যা তাদের শত্রুতাপূর্ণ বক্তব্য সত্ত্বেও নেওয়া হয়েছিল।’ 

গত বৃহস্পতিবার, ওয়াশিংটন ইরানের তেল নেটওয়ার্ক এবং পরমাণু কর্মসূচির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সূত্র : রয়টার্স।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here