পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন জাস্টিন ট্রুডো

0

দীর্ঘ এক দশক ধরে কানাডার নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার অটোয়ায় নিজ বাসভবনের বাইরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। ট্রুডো জানান, লিবারেল পার্টি নতুন একজন নেতা নির্বাচন না করা পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করে যাবেন।  

২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন জাস্টিন ট্রুডো। এরপর আরও দু’টি নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা প্রায় ১০ বছর কানাডার নেতৃত্বে ছিলেন এই ৫৩ বছর বয়সী নেতা। তার এই দীর্ঘ সময়ের নেতৃত্ব কানাডার রাজনীতিতে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে থাকবে।

ট্রুডো তার প্রথম মেয়াদে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। কানাডার ইতিহাসে তার জনপ্রিয়তা অন্য যেকোনো প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় ছিল অনেক বেশি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।  

এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসে দেশটিতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ব্যাপক আগমন। এতে আবাসন সংকট এবং জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এই সংকট মোকাবিলায় ট্রুডোর সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়া তার জনপ্রিয়তায় বড় ধরনের ধাক্কা দেয়।

গত অক্টোবরের প্রাদেশিক ও স্থানীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টি বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির কাছে বড় ধরনের পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। এরপর থেকেই ট্রুডোর ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকে।  

দলের অভ্যন্তরীণ সংকট আরও প্রকট হয় গত ডিসেম্বরে, যখন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড রাষ্ট্রীয় নীতি নিয়ে ট্রুডোর সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেন। এসব ঘটনা লিবারেল পার্টির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দলের নেতা-কর্মীরা চান, পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রুডো যেন নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। দলের এই মতামতের প্রতি সম্মান জানিয়ে ট্রুডো পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।  

সোমবারের ভাষণে ট্রুডো জানান, লিবারেল পার্টি নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করার আগ পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থাকবেন। তবে পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে দল নতুন নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হবে।  

তিনি আরও বলেন, “আমার একটি দুঃখ থেকে যাবে যে আমরা আমাদের নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে পারিনি। বর্তমানে যে পদ্ধতি রয়েছে, তাতে ভোটারদের ব্যালট পেপারে দ্বিতীয় বা তৃতীয় কোনো বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যা মেরুকরণ এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর রাজনীতিকে সহায়তা করে।”

সাংবিধানিক সময় অনুযায়ী, কানাডায় পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের অক্টোবরে। নির্বাচনের আগে বড় কোনো অঘটন না ঘটলে লিবারেল পার্টির সরকারই ক্ষমতায় থাকবে। দলীয় এমপিদের মধ্য থেকেই কেউ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।  

জাস্টিন ট্রুডোর এই পদত্যাগ শুধু তার রাজনৈতিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নয়, বরং কানাডার রাজনীতিতে নতুন এক পরিবর্তনের সূচনা হতে যাচ্ছে।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here