অস্ত্রের বাজারে নতুন খেলোয়াড়ের আবির্ভাব। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা ফ্রান্সের পাশাপাশি সেখানে এবার পা দিতে শুরু করেছে চীন। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর নাকের ডগায় অস্ত্র সরবরাহ করছে চীনের লালফৌজ। শুধু তাই নয়, তাদের দেওয়া হাতিয়ারের ভূয়সী প্রশংসা করেছে সেখানকার সরকার। ফলে অস্বস্তি বেড়েছে ওয়াশিংটনসহ পশ্চিমি বিশ্বের।
দক্ষিণ ইউরোপের বলকান রাষ্ট্র সার্বিয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনায় যার নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ২১ শতকে সেখানেই মোতায়েন হয়েছে চীন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। পোশাকি নাম ‘এফকে-৩’। এই হাতিয়ারটিকে নিয়েই বড় ঘোষণা করেছে বেলগ্রেড। বলা বাহুল্য এর পরই আমেরিকাসহ পশ্চিমি বিশ্বের রক্তচাপ বাড়তে শুরু করেছে।
বিদায়ী বছরের ৩০ ডিসেম্বর সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চীনের তৈরি ‘এফকে-৩’ এয়ার ডিফেন্স দেশের আকাশকে ভালোভাবেই সুরক্ষা প্রদান করছে। এর সাহায্যে বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী এবং উন্নত করা গিয়েছে। উল্লেখ্য, বেইজিংয়ের ‘পিপলস্ লিবারেশন আর্মি’র (পিএলএ) হাতে রয়েছে ‘এইচকিউ-২২’ ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। ‘এফকে-৩’ এর রফতানিযোগ্য সংস্করণ বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, সার্বিয়ায় রফতানি করা চিনা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিতে রয়েছে কম্যান্ড সেন্টার, মিসাইল লঞ্চার, রাডার এবং লজিস্টিক সাপোর্ট ভেহিকল। শত্রুর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে এই এয়ার ডিফেন্সের। এটি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এর সঙ্গে রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস ৩০০’-এর বেশ মিল রয়েছে।
২০১৯ সালে ‘এফকে-৩’ সিস্টেম কিনতে বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে বেলগ্রেড। ঠিক তার পরের বছর এই ইস্যুতে সার্বিয়াকে সতর্ক করে আমেরিকা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ পেতে হলে এই সিদ্ধান্ত থেকে বেলগ্রেডকে সরে আসবে বলে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি, হাতিয়ারের নাম নেটোভুক্ত দেশগুলির সমকক্ষ করতে বলা হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকিকে একেবারেই আমল দেয়নি বেলগ্রেড।
২০২২ সালে ‘ওয়াই-২০’ পরিবহন বিমানে ‘এফকে-৩’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সার্বিয়াকে সরবরাহ করে চিন। সাম্প্রতিক অতীতে ইউরোপে এত বড় আকারের হাতিয়ারের রফতানি আর করেনি বেইজিং। সার্বিয়াই মহাদেশটির প্রথম রাষ্ট্র, যারা ড্রাগনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের উপর ভরসা রাখল।
সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘এফকে-৩’র সঙ্গে একাত্ম হতে প্রতি দিনই চলছে অনুশীলন। এয়ার ডিফেন্স মিসাইল ব্রিগেডের ২৫০তম ব্যাটেলিয়নের হাতে রয়েছে এর মোতায়েন এবং ব্যবহারের ক্ষমতা। এর সর্বোচ্চ অপারেশনাল কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ এবং কর্মক্ষমতা মূল্যয়নের কাজ চলছে।
সার্বিয়া বিমানবাহিনীর পদস্থ কর্তা স্টেফান মানিচ ‘এফকে-৩’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে একটি মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন। এর কার্যকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘‘চীনা এয়ার ডিফেন্সে অ্যান্টি জ্যামিং প্রযুক্তি রয়েছে। এটি ক্ষেপণাস্ত্রের আক্রমণ থেকে রাডারকে আলাদা করে একটা সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এক সঙ্গে ১২টি ক্ষেপণাস্ত্রে এবং ছয়টি যুদ্ধবিমানকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে এফকে ৩-এর। এই ধরনের অন্য ব্যবস্থাগুলির চেয়ে এর ফায়ার পাওয়ার অনেকটাই বেশি।’’
স্টেফান জানিয়েছেন, ‘এফকে-৩’ সরবরাহের আগে সার্বিয়ার বিমানবাহিনীর একটি দল ড্রাগনল্যান্ডে গিয়েছিল। সেখানে এই হাতিয়ার চালানো এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ পান তারা। প্রযুক্তিগত দিক থেকে চীনা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিকে যথেষ্ট জটিল বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বেলগ্রেডের দাবি, সরকারি ভবন এবং গুরুত্বপূর্ণ সেনা ছাউনির নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ‘কেএফ-৩’ এয়ার ডিফেন্সকে মোতায়েন করা হয়েছে। চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘গ্লোবাল টাইমস্’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে শত্রুবিমান, কপ্টার বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করতে সক্ষম এই হাতিয়ার। ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে এটি আটকাতে পারবে কিনা, তার উল্লেখ সেখানে করা হয়নি।