নীলফামারীর জনপ্রিয় খাবার নাপা শাকের পেলকা

0

নীলফামারীর জনপ্রিয় ও ভিন্ন রন্ধনশৈলীর মজাদার খাবার নাপা শাকের পেলকা। এ মজাদার খাবারের গল্প এখন সবার মুখে মুখে। শুধু মজাদারই নয়, রয়েছে ভেষজ ওষুধি গুণে ভরপুর। শীত এলে প্রতিটি ঘরে ঘরে পেলকা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। শীতের সকালে ধোঁয়া উঠা ভাতের সাথে পেলকা, আলু ভর্তা, কাঁচা মরিচ চিবিয়ে পেট ভরে না খেলেই যেন নয়!

ডিমলা উপজেলার উত্তরতিতপাড়া গ্রামের গৃহবধূ বিলকিছ আক্তার বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে পেলকার উপকরণ সংগ্রহে বাড়ির উঠানে লাগানো শীতের নাপা শাক, বতুয়া শাক, পালং শাক, বাবই শাক, খুড়িয়া শাক, পুঁই শাক, ধনে পাতা সংগ্রহ ও পরিচর্যার পর কুচিকুচি করে একত্রে রান্নার চুলার পাতিলে তুলে দেই। এরপর পাতিলে দেয়া হয় পরিমান মত লবন ও পানি। এসব উপকরণ ভালোভাবে সিদ্ধ ও পিচ্ছিল করার জন্য ব্যবহার করা হয় খাবারের সোডা। পেলকার স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচ, আদা, রসুন একত্রে বেটে দেওয়া হয়। সব কিছুর সংমিশ্রনে পাতিলে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল দেয়া হয়। রান্নার উপযোগী হলে ঘুটনি দিয়ে নেড়ে ঘণ্ট করা হয়। এতে বাড়তি তেল মসল্লার প্রয়োজনও হয় না। রান্না শেষে পরিবারের সবাই একত্রে বসে গরম গরম ভাতে পেলকা মেখে চলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার উত্তর দুরাকুটি পশ্চিমপড়া গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, দুইভাবে পেলকা রান্না করা যায়। শীতে নাপাসহ অন্যান্য শাক দিয়ে এবং বর্ষাকালে সজনে পাতা, কচু পাতা, পাট পাতা, চাম ঘাস বা থানকুনির পাতা, রসুন শাকের পাতা, মিষ্টি আলুর পাতার সংমিশ্রনে নাপা শাকের নিয়মে পেলকা তৈরি করে এর সাথে চাল ভেজে তা গুঁড়া করে মিশিয়ে দেয়া হয়। একে চাল পিটালি বা চালের গুড়ার পেলকা বলে। এর স্বাদ আরো বেশি। শীতে কিংবা বর্ষাকালে পেলকা না খেলে তৃপ্তি মেটেনা।

একই গ্রামের প্রবীণ ব্য্যক্তি আমিনুর রহমান বলেন, নাপা শাক ও সজনে পাতার পেলকা ঐতিহ্যবাহী একটি মজাদার খাবার। তাই এ শীতে ঘরে ঘরে নাপা শাকের পেলকা খাওয়ার ধুম পড়েছে। এর পাশাপাশি আছে সিঁদল ভর্তা। মৌসুম অনুযায়ী দেশী পাট শাকের ভাজি, টোস্বা শাকের ঝোল, খাটা, মাছ, মাংস বাদে এসব তরকারি হলে তৃপ্তি সহকারে ভাত খাওয়া যায় পেট ভরে। এতে এ খাবারের ঐতিহ্য ধরে আছে আদিকাল থেকে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আজিজার রহমান বলেন, রংপুরের নিজস্ব অন্যান্য খাবারে মধ্যে একটি জনপ্রিয় ও মুখরোচক খাবার নাপা শাক ও সজনে পাতার পেলকা। শুধু ঐতিহ্যবাহী খাবারই নয়, নানা সবুজ পাতার সংমিশ্রনে রান্না করা সুপ বা তরকারি ভেষজ ওষুধি গুনে ভরপুর। এতে ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের এক ভালো উৎস। এটি বিশেষভাবে ভিটামিন এ এবং সি, ফোলেট, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফলিক এসিডসহ অনেক পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here