নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য

0

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হত্যাকাণ্ডের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে (২৫) নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

বুধবার রাত ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে সড়াতৈল জান্নাতুলবাকী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে শাহরিয়ার আলমের মরদেহ বহনকারী গাড়ি গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজন, প্রতিবেশীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে সেখানে ভিড় করেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। এরপর রাত ১০টার পর সড়াতৈল হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে সাম্যর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজা পূর্ব এক বক্তব্যে সাম্যর চাচা মাহবুবুল আলম বলেন, কোনো সময় কোনো কারণে নিজে আঘাত পেলেও সাম্য কাউকে আঘাত দিত না। আমি মনে করি মেধাবী শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।  আমরা হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। আর যেন কোনো ছেলের লাশ বাবার কাঁধে বহন করতে না হয়। 

ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ছাত্রদল নেতা সাম্য মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। কলেজ ক্যাম্পাসে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। প্রশাসন এতে ব্যর্থ হলে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করতে বাধ্য হব।

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যদি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন, তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সিরাজগঞ্জ থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম খান আলিম বলেন, ছাত্রদল নেতা সাম্য দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্র সৈনিক ছিল। গণতন্ত্র বিরোধীরা তাকে হত্যা করেছে। আমরা দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

জানাযা নামাজ ও দাফনকার্যে ঢাবির শিক্ষক মাহবুব মোর্শেদ, বায়েজিত সুমন, ঢাবি শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আবুবক্কার সিদ্দিক, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারন সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজ, বেলকুচি উপজেলা জামায়াতের আমীর আরিফুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রিজন আহমেদ, ঢাবিতে অধ্যয়নরত সাম্যর সহপাঠীসহ স্থানীয় বাসিন্দা ও আশপাশের গ্রামের মানুষও অংশ নেন।

উল্লেখ্য, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় মঙ্গলবার রাত ১১টায় দুর্বত্তেদের ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যের বাবা ফকরুল আলম ঢাকার মিরপুরে রুপনগর আবাসিক এলাকায় থাকেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সাম্য সবার ছোট। কয়েক বছর আগে তার মা মারা গেছেন। সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্য হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here