নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অদম্য গতিতে এগিয়ে চলার অর্ধশত বছরের স্মৃতির প্রতীক হিসেবে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’ তার ৫০ বছর পূর্তির উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘অর্ধশত বছরের গৌরব, ঐতিহ্য, সাফল্য ও অর্জন’র এ উৎসবে জড়ো হয়েছিলেন হাজারখানেক প্রবাসী। ছিলেন ৫০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃত্ব প্রদানকারিগণের কয়েকজনও।
কুইন্সের অভিজাতশ্রেণীর অডিটরিয়াম ‘ট্যারেস অন দ্য পার্ক’র আলো ঝলমল মিলনায়তনে প্রবাসের অন্যতম জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নৃত্যাঞ্জলি’র শিল্পীরা ‘আমি বাংলায় গান গাই’র সাথে নৃত্য পরিবেশনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটান। এর আগে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এছাড়া পবিত্র গীতা থেকে পাঠের আগে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর এই সংগঠনের প্রয়াত সকল কর্মকর্তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় জামিল আনসারীর নেতৃত্বে।
স্বাগত বক্তব্য দেন সুবর্ণ জয়ন্তি উৎসবের আহবায়ক এবং বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন দেওয়ান। এরপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্যে ৬ ব্যক্তিকে ‘সোসাইটির এওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।
এরা হলেন সাংবাদিকতায় সৈয়দ মুহাম্মদ উল্লাহ, সমাজকর্মে জীবন উৎসর্গ করা কামাল আহমেদ (তার কন্যা রুমানা আহমেদ এওয়ার্ড গ্রহণ করেন), ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সাইদুর রহমান ডন, সাংস্কৃতিক সংগঠক সেলিমা আশরাফ, শিক্ষা বিস্তারে মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী, সংগঠক কাজী আজহারুল হক মিলন এবং বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির সন্তানদের টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ২৫ বছর যাবত কর্মরত ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’।
সোসাইটির কর্মকর্তারা এসব এওয়ার্ড হস্তান্তর করেন। নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমার বাংলাদেশ সোসাইটি এবং এর শীর্ষ কর্মকর্তাগণকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করেছেন কম্যুনিটি সার্ভিসে অবদানের জন্যে। কুইন্স বরো প্রেসিডেন্টের অফিস থেকেও সাইটেশন প্রদান করা হয় বিপুল করতালির মধ্যে।
হার্ভার্ড থেকে গ্র্যাজুয়েশনকারি নামিরা মেহেদি এবং ভিক্টর ঘোষ, সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা-প্রশাসনে উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়াও মার্কিন সেনাবাহিনীর ল্যাফটেন্যান্ট হিসেবে গ্র্যাজুয়েশনকারি আনিকা জেবা।
এরপর সাবেক সভাপতি ও সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি ডা. হামিদুজ্জামান বলেছেন, ‘সোসাইটির কার্যকরী কমিটিতেও নতুন প্রজন্মের অন্তর্ভুক্তি ঘটাতে হবে। সদস্য হিসেবেও তারা যাতে অগ্রাধিকার পায় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। কারণ তারাই প্রথম প্রজন্মের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে। এরপরের প্রজন্মকে অত সহজে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট করা সহজ হবে না।’
ডা. হামিদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ সোসাইটি আজ যেমন ঐক্যের প্রতিক, তেমনি এটি আগামী প্রজন্মের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি আধুনিক, সাংষ্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা-যা প্রবাসে আমাদের স্থায়ী পরিচয়ের প্রতিক হয়ে থাকবে।’
সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি ডা. মইনুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, গৌরবময় মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘আসুন ঐক্য, ভালবাসা এবং দেশপ্রেমের শক্তিতে বাংলাদেশ সোসাইটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই আগামী প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল ও গর্বিত ভবিষ্যতের পথে।’
বিডি-প্রতিনিধি/আশফাক

