নারী সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবনাকে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ বলে মনে করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। বৃহস্পতিবার নিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, ‘নারী সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবনা পেশ করেছে, সেটার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান তো একেবারেই পরিষ্কার। নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আমরা আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করেছি। এটার পুরোটাই আমাদের কাছে প্রত্যাখ্যানযোগ্য মনে হয়েছে। শুধু তাই না, এটা চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ একটা প্রস্তাবনা বলে আমরা চিহ্নিত করেছি। সব ইসলামি সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিন্ন ভাষায় এটার প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। শুধু প্রস্তাবনা নয়, এ রকম প্রস্তাবনা দেওয়া এই কমিশনকেও বাতিল করার আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিবেদনের আদ্যোপান্ত—এটার যে মূল ভিত্তিগুলো; সেটা ইসলামের শাশ্বত বিধান আল্লাহর কোরআনের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষিক। শুধু সংঘর্ষিকই নয়; বরং কোরআনকে কটাক্ষকারী প্রস্তাবনা।’
মামুনুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে আবহমান কাল থেকে যে সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, পবিরারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা; এই প্রস্তাবনার মূল কথা হলো— আমাদের সেই সমাজব্যবস্থা ভেঙে পাশ্চাত্যের একটা পরিবার, সমাজ বা কালচার গড়ে তোলা।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাবনায় আরেকটা বিষয় মনে হয়েছে, তারা এখানে সমকামিতার একটা বৈধতা দিতে চায়। এই প্রস্তাবনার আরেকটি লক্ষ্য, এ দেশের নারী সমাজকে বেহায়াপনার দিতে ধাবিত করা এবং যৌনকর্মকে উৎসাহিত করা। প্রতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়া এবং পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার একটা ঘৃণ্য মানসিকতা।’
মামুনুল হক বলেন, ‘উত্তরাধিকার আইনে তারা সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশের প্রস্তাবনা দিয়েছে। সমাজব্যবস্থায় সম্পদের অংশ পাওয়ার সঙ্গে আরও অনেকগুলো বিষয় সম্পৃক্ত। খরচের দায়িত্ব কার, ভরপোষণের দায়দায়িত্ব কার? এ বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো সম্পদের মালিকানা কার কতটুকু হবে। সংসারে কার কতটুকু দায় তার ওপর ভিত্তি করে— সম্পদ কে কতটুকু পাবে তা নির্ধারিত হবে। এ ক্ষেত্রে তারা শুধু এক দর্শন নীতি অবলম্বন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা বিবাহের জন্য সব ধর্মবলম্বীদের জন্য অভিন্ন আইনের প্রস্তাবনা করেছে। অর্থাৎ সব ধর্মের মানুষের একই আইনে বিবাহ হবে। বিবাহের বিষয় তো কোনো রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক বিষয় নয়, এটা স্পষ্ট ধর্মীয় বিষয়। ধর্মীয়ভাবে বিবাহ বন্ধনের একটা পদ্ধতি রয়েছে এবং তা ছিন্ন হওয়ারও একটা পদ্ধতি রয়েছে। এটা তো কোনো মানুষের নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয় না, কোনো রাষ্ট্রেরও নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয় না। রাষ্ট্র শুধু পর্যবেক্ষণ করতে পারে, প্রত্যেকে ধর্মের বিধান বিবাহের ক্ষেত্রে পালন করছে কি না। বিশেষ করে ইসলামের বিষয়ে। ইসলামের বিধানগুলোতে একেবারেই কংক্রিট। এ বিষয়ে আল্লাহর কোরআনে তো স্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে। বিশেষ করে উত্তরাধিকার সম্পত্তির ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে বলা আছে, কীভাবে বণ্টন হবে। কাজেই এভাবে কোরআনের বিধানকে পরিবর্তন করার প্রস্তাবনা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি নারীবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করা এবং এই কমিশন বাতির করা। এর সঙ্গে আরও তিনটি দাবি সমন্বিত করে মোট ৪ দফা দাবিতে আগামী ৩ মে শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ হতে যাচ্ছে। এই দাবির সঙ্গে সকল ইসলামপন্থীরা একমত।’