নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক চরমে

0
নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক চরমে

দীর্ঘদিন শান্ত থাকার পর আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো। তিন দিন ধরে ৪৩-৪৯ নম্বর আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলারের বিপরীতে দফায় দফায় প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতকাল রবিবার সকালেও ৪৩-৪৯ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন।

সংঘর্ষ চলাকালে কয়েক রাউন্ড গুলি সীমান্ত অতিক্রম করে গত শনিবার দুপুর ১টার দিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে। এর মধ্যে একটি গুলি নাইক্ষ্যংছড়ির সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চাকঢালা এলাকার চেরারমাঠ গ্রামের কৃষক ছৈয়দ আলমের বাড়িতে আঘাত হানলে দেয়ালে গর্তের সৃষ্টি হয়। আরো কয়েকটি গুলি ফসলি জমি ও বাড়ির উঠানে এসে পড়েছে। তবে এতে কোনো হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে এই গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তঘেঁষা গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে।

বিশেষ করে ঘুমধুম, দৌছড়ি, চাকঢালা, সাপমারা ঝিরিসহ সীমান্তবর্তী এলাকার গ্রামের নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসব সীমান্তবর্তী এলাকার অনেক পরিবার নিরাপদ স্থানে সরে গেছে বলে জানা গেছে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মায়ানমার জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে দখল করা আরাকান আর্মির ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে দুটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ। শনিবার বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের ৪৩-৪৪ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী এলাকার পুরান মাইজ্যা নামক ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে।

মায়ানমারে বর্তমানে সক্রিয় বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ কিছুদিন ধরে সক্রিয়। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) দুটি গ্রুপ শুক্রবার রাত থেকে যৌথ হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মির ঘাঁটিতে। ত্রিপক্ষীয় দফায় দফায় হামলায় গোলাগুলির ভয়াবহ শব্দ ভেসে আসছে ঘুমধুম, দৌছড়ি, চাকঢালা, জামছড়ি, সাপমারা ঝিরিসহ আশপাশের সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে। এতে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ওই সব গ্রামে। তবে হামলার ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

চাকঢালার বাসিন্দা মো. কামাল আহমেদ এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, মায়ানমারের তিনটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ বেশ কিছুদিন ধরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বলে ওপারের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। একই এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন জানান, শুক্রবার রাত থেকে মায়ানমারে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। শনিবার সকাল ১১টার দিকে গোলাগুলির সময় রাইফেলের কয়েক রাউন্ড গুলি বাংলাদেশের চাকঢালার চেরারমাঠ গ্রামে এসে পড়ে।

চাকঢালার চেরারমাঠ গ্রামের বাসিন্দা ছৈয়দ আলমের স্ত্রী আলমাস খাতুন ও ছেলে ওসমান গণি জানিয়েছেন, মায়ানমারের ওপারে গোলাগুলির সময় শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁদের বাড়ির উঠানে এবং ফসলি জমিতে কয়েকটি গুলি এসে পড়েছে। এর মধ্যে একটি গুলি বাড়ির দেয়ালের গায়ে লেগেছে। এতে দেয়ালে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পরে খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানান মা ও ছেলে।

জামছড়ি এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম, ছৈয়দ নূর ও গুরা মিয়া জানান, শনিবার সকাল ও দুপুরে দুই দফায় তাঁরা গুলির প্রচণ্ড শব্দ শুনেছেন। সীমান্তের এসব বাসিন্দার ধারণা, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরএসওর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে আরাকান আর্মি। সংঘর্ষের পেছনে আরসার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তাঁরা।

চাকঢালার সাবেক ইউপি সদস্য ফরিদ আলম জানান, ক্যাম্পটি সম্প্রতি মায়ানমার সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখল নেয় বিদ্রোহী এই সংগঠনটি। শনিবার সকাল থেকেই মায়ানমারের পুরান মাইজ্জা ক্যাম্প এলাকা থেকে আরাকান আর্মি গোলাগুলি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতিতে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দায়িত্বে থাকা ১১ বিজিবি ও ৩৪ বিজিবি তাদের টহল জোরদার করেছে। বিজিবির জওয়ানদের কঠোর অবস্থানে দেখেছে স্থানীয় লোকজন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় সজাগ রয়েছে প্রশাসন। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর লোকজনের যাতে ক্ষয়ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি জানান, প্রশাসন জনগণকে সতর্ক করার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সচেতনতা বাড়াতে সীমান্ত এলাকায় মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here