নরসিংদীর চরাঞ্চলে এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। দিগন্ত জোড়া বিস্তীর্ণ মাঠে যে দিকেই চোখ যায়, সেদিকেই কেবল বাঙ্গি চাষের সমারোহ। চৈত্রের বাহারি মৌসুমি ফল বাঙ্গির বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় জেলার বাঙ্গি চাষিদের মুখে এখন খুশির হাসি।
উৎপাদিত বাঙ্গি নিয়ে ভালো লাভের আশায় স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। তাছাড়া অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় প্রতি বছরই নরসিংদীর চরাঞ্চলে বাড়ছে বাঙ্গির আবাদ। এবার জেলায় প্রায় এক হাজার টন বাঙ্গির উৎপাদন হওয়ার আশাবাদ কৃষি অধিদপ্তরের। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা।
দেশের বেশির ভাগ চরাঞ্চলেই বাঙ্গি উৎপন্ন হয়। পলি, পলি দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ-এসব মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বাঙ্গি আকারে বেশ বড় হয়। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ রঙের হয়। একটু বেশি পেকে গেলে বাঙ্গি সহজে ফেটে যায়। ফলের বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো হালকা ডোরাকাটা খাঁজযুক্ত। এর ভেতরটা ফাঁপা থাকে। খেতে তেমন মিষ্টি নয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া বিস্তীর্ণ মাঠে যে দিকেই চোখ যায়, সেদিকেই কেবল বাঙ্গি চাষের সমারোহ। কাঁচা পাকা বাঙ্গিতে ভরপুর ফসলের মাঠ। জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা কৃষকদের সঙ্গে দরদাম করছেন। দুই পক্ষের যুক্তিতর্কে চলেছে বেচাকেনা। জমি থেকে প্রতি পিস বাঙ্গি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। পরে পাইকারদের মাধ্যমে সুস্বাদু এ ফলটি পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। খুচরা পর্যায়ে যা বিক্রি হয়ে দেড়শ থেকে দুইশ টাকায়।
কৃষকরা জানায়, বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ লাগে না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একবারে চাষ করেন। প্রথমে রসুন তুলে নেয়ার পর বাঙ্গি বিক্রি শুরু হয়। ভালো লাভ পাওয়ায় প্রতিবছর বাড়ছে বাঙ্গির আবাদ।
বাঙ্গি চাষি মো. নজরুল বলেন, এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছি। এতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করি জমি থেকে তিন লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবো।
বাঁশগাড়ি গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, প্রথমে মরিচ চাষ করতাম। গত ১০ বছর ধরে বাঙ্গি চাষ করি। প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার বাঙ্গি বিক্রি করি। দাম ভালো পাওয়া আমরা বাঙ্গি চাষ করে লাভবান হচ্ছি। যার ফলে পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে চলতে পারছি।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বাঙ্গির আবাদ। এবার জেলায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন হবে প্রায় এক হাজার টন বাঙ্গি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। বাঙ্গি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় দিনদিন এর চাহিদা বাড়ছে। আগামীতে বাঙ্গির আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করছে। কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতার মাধ্যমে বাঙ্গির ফলন আরো বৃদ্ধি করা হবে।