নবান্ন উৎসবে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা

0
নবান্ন উৎসবে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা

অগ্রহায়ণ মাসের তৃতীয় দিনে নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দে নবান্ন উৎসব উদযাপন করছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কৃষকরা। মেয়ে-জামাই, বিয়াই-বিয়ানসহ স্বজনদের নিয়ে পিঠা-পায়েসের আয়োজনের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা বসে কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে। ক্যালেন্ডার নয়, পঞ্জিকা অনুসারে নির্ধারিত এই দিনে প্রতি বছর একদিনের জন্য বসে এ অঞ্চলের বৃহত্তম মাছের মেলা, যার অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয় মানুষজন।

মঙ্গলবার ভোর রাত থেকেই পাঁচশিরা বাজারে ঢল নামে ক্রেতা-বিক্রেতা ও কৌতূহলী মানুষের। মেলায় নদী, দীঘি, হাওর ও পুকুরে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। জামাইদের উদ্দেশে মেলা থেকে মাছ কেনা এক ধরনের প্রতিযোগিতায় রূপ নেয়। দোকানজুড়ে সাজানো থাকে রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, ব্রিগেটসহ বিভিন্ন জাতের মাছ।

এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ হিসেবে ৩৫ কেজি ওজনের একটি সিলভার কার্প ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১৯ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার টাকায়। মেলার আলাদা কোনো আয়োজক না থাকলেও স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই প্রস্তুতি নেন এবং মাইকে প্রচার চালান।

fish fair
নবান্ন উৎসবের মেলায় দেশি মাছ কেনায় ব্যস্ত ক্রেতারা। ছবি: বিডি প্রতিদিন

মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, বড় মাছের দাম কেজিপ্রতি ৭০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা এবং বাঘাআইর ও চিতল মাছ ১,৩০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের মাছ বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। তবে এবার ক্রেতা তুলনামূলক কম হওয়ায় বিক্রি কিছুটা ধীর বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বগুড়ার শিবগঞ্জের জামাই মিজানুর রহমান নবান্ন উৎসব উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ির দাওয়াতে এসে মেলা থেকে ১২ কেজির একটি কাতলা মাছ কেনেন। তিনি বলেন, ‘জামাইদের জন্যই এই মেলা, তাই মাছ কেনা লাগে। দাম একটু বেশি, তবুও উৎসবের আনন্দটাই আলাদা।’

মুলগ্রাম মহল্লার সতেন চন্দ্র বর্মণ জানান, প্রতি বছর মেলা উপলক্ষে বাড়িতে ভরপুর আয়োজন করতে হয়। তিনি ২৬ হাজার টাকায় ১৪ কেজির একটি কাতলা এবং ১৮ কেজির একটি সিলভার কার্প কিনেছেন। 

কালাই হাট ইজারাদার আব্দুল আলিম সরকার বলেন, ‘এই মেলা আয়োজন করতে হয় না, প্রতিবছর স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বসে। এবারে মাছের আমদানি আগের বছরের চেয়ে বেশি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, এবার মেলায় ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছ উঠেছে, যা চাষিদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলছে। মেলায় অন্তত এক কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হবে। মৎস্য বিভাগ নিয়মিতভাবে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here