নওগাঁয় সম্পত্তির জন্য ৯০ বছরের বৃদ্ধা মাকে ফেলে গেল সন্তানেরা

0

একে একে জন্ম দিয়েছেন ৮টি সন্তান। আদর যত্নে বড় করেছেন তাদের। হাসি ফোটাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি তিনি। শেষ বয়সে সেই ৮ সন্তানের কাছে চেয়েছিলেন একটু আশ্রয় ও দুবেলা দুই মুঠো খাবার। কিন্তু বৃদ্ধা মা এখন তাদের বোঝা। তিন বিঘা জমি মেয়েদের নামে লিখে দেওয়ায় কাল হলো তার। স্বামীর ৪০ বিঘা সম্পত্তি থাকার পরও তার কপালে জুটছে না শান্তিতে ঘুমানোর জায়গা আর দুবেলা ঠিকমতো খাবার।  ৯০ বছরের বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের অসহায়ত্বের কথা এটাই।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের জগৎনগর গ্রামের মৃত মোতাহারের স্ত্রী তিনি। বয়সের ভারে ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না, করতে পারেন না চলাফেরাও। তিন ছেলে ও ৫ মেয়ের জননী তিনি। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে জগৎনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে জগৎনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম খোলা আকাশের নিচে একটি বালিশের ওপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন। কথা বলার চেষ্টা করলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন আর কিছু বলতে পারেন না। বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে রাতে মশার হাত রক্ষার জন্য গ্রামবাসী মশারি টাঙিয়ে দিয়েছেন, কেউ আবার কয়েল জ্বালিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন কেউ একনজর দেখতে আসেনি।

ছেলেদের সাথে কথা বলার জন্য গেলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দেয়। তবে এ ঘটনার এক ঘণ্টা পর থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করার পর তারা ঘটনাস্থলে আসলে মশিয়ার রহমান নামের এক ছেলে তার মা সুফিয়া বেগমকে খোলা মাঠ থেকে নিয়ে তার বাড়িতে জায়গা দেন।

বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের মেয়ের জামাই ফিরোজ হোসেন বলেন, আমার শাশুড়ি আমার কাছেই ছিল। ছেলেরা তার খোঁজ খবর নেয় না। অসুস্থ হওয়ার খবর শোনার পরও তার ছেলেরা মাকে দেখতে আসেনি। তাই রাগ করে আজকে তার মেয়ে আঙ্গুরা বেগম তার মা’কে অর্থাৎ আমার শাশুড়িকে ফাঁকা মাঠে ফেলে চলে আসে।

এ বিষয়ে মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আহসান হাবিব লিটন বলেন, সুফিয়া বেগমের স্বামীর ৪০ বিঘার প্রায় সকল জমিই ছেলেরা দখলে রাখে। এছাড়া কিছু জমি ছেলেরা আগেই তার বাবার কাছ থেকে লিখে নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম তার নামে থাকা তিন বিঘা জমি পাঁচ মেয়েদেরকে লিখে দেন। এরপর ছেলেদের কাছে শত্রু হয়ে যায় জন্মদাতা মা। তারপর থেকেই মায়ের খোঁজ নেয় না ছেলেরা। পরবর্তীতে একই গ্রামের ছোট মেয়ে আঙ্গুরা বেগম ও জামাই ফিরোজ হোসেনের বাড়িতে জায়গা হয় তার। কিন্তু কতোদিন? এই ক্ষোভ থেকে মেয়ে রেখে গিয়েছে খোলা আকাশের নিচে। তিনি আরো বলেন, বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের বড় ছেলে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, অপর দুই ছেলে মশিয়ার ও আতোয়ার কৃষি কাজ করেন। আর মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ৮ বছর আগে স্বামী মারা যায়। তাইতো সম্পত্তির জন্য বৃদ্ধা মা এর স্থান হলো খোলা আকাশের নিচে। ফেলে গেল তার আপন সন্তান।

বদলগাছী থানার উপ-পরিদর্শক নিহার চন্দ্র বলেন, এ ঘটনা জানার পর রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তার ছেলেদের সাথে কথা বলেছি, তার ছেলে মশিয়ার রহমানের কাছে আছেন বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগম। মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব না নিলে ছেলে-মেয়েদের বিরুদ্ধে ভরণপোষণ আইনে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান তিনি। বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি বলেন, পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here