শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়। কয়েক সেকেন্ডের দুলুনিতে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে আতঙ্কে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে এবং উৎপত্তিস্থলে এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭।
ভূমিকম্পে ঢাকার আরমানিটোলার একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দেয়াল ধসে মারা গেছে একটি শিশু। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যদিও সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু ভবনে ফাটল ধরা ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। গবেষকদের মতে, চলতি বছর দেশের ভেতর উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী। ২০২৩ সালের রামগঞ্জের ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পকেও এটি ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি গত অন্তত ২৩ বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ মাত্রার বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও গবেষক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পটি ৫.৬ বা ৫.৭—যাই হোক না কেন, ভূ-পৃষ্ঠে যে তীব্রতা অনুভূত হয়েছে তা ৫ থেকে ৬ মাত্রার মতো ছিল। তিনি বলেন, “আমাদের স্মরণকালে এরকম তীব্র ভূমিকম্প আমরা অনুভব করিনি।”
তিনি আরও জানান, এই ভূমিকম্পটি ভারতীয় ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে হয়েছে, যা সুনামগঞ্জ–কিশোরগঞ্জ হয়ে মেঘনা নদীর দিকে নেমে গেছে। এ অঞ্চল সাবডাকশন জোন হিসেবে পরিচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জোনে দীর্ঘদিন ধরে ৮.২–৯ মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়ে আছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়াত কবীর জানান, তাঁর ২৩ বছরের চাকরিজীবনে তিনি ঢাকায় এরকম ঝাঁকুনি অনুভব করেননি। তিনি বলেন, “এ সময়ের মধ্যে দেশের ভেতর হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প।”
তিনি আরও বলেন, “হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা একটি বোমা যে মাত্রার শক্তি রিলিজ করে, আজকের ভূমিকম্পে সেই মাত্রার শক্তি রিলিজ হয়েছে।”
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী জানান, আজকের ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি প্রায় ২০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। তিনি সতর্ক করে বলেন, “৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পেই যত ক্ষতি হয়েছে, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় এক থেকে তিন লাখ মানুষ হতাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শহরের প্রায় ৩৫ শতাংশ ভবন ভেঙে পড়তে পারে।”
তিনি দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তকরণ ও সংস্কারের ওপর জোর দেন। বলেন, “রাষ্ট্রকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। ভবনগুলো পরীক্ষা করে মানুষকে জানাতে হবে কোনগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাহলেই অন্তত ঝুঁকি কিছুটা কমানো যাবে।”
সূত্র: কালের কণ্ঠ

