মাঘের মাঝামাঝি সময়ে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ নওগাঁয় জেঁকে বসেছে শীত। আজ রবিবার সকালে নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি শীত মৌসুমে নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। সকালে কুয়াশার পরিমাণ কমে সূর্যের দেখা মিললেও উত্তরের হিমেল বাতাস অব্যাহত থাকায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে।
কনকনে শীত অনুভূত হওয়ায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে খেটে খাওয়া মানুষের। শীতের কারণে শহরে মানুষের আনাগোনাও কমেছে। যারা বের হয়েছেন, তাঁরা মোটা ও গরম কাপড় জড়িয়ে বাইরে এসেছেন। এছাড়া শীতের কারণে মাঠে কাজ করতে চাইছে না কৃষি শ্রমিকরা। এ অবস্থায় শ্রম মজুরি ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।
হিমেল বাতাসের কারণে জেলায় সারাদিনই শীত অনুভূত হওয়ায় শীত কষ্ট পোহাচ্ছেন জেলার শহর ও গ্রামীণ জনপদ এর মানুষজন। সকালে সূর্য উঠলেও নিরুত্তাপ রোদ্রের কারণে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। অন্যদিকে শীতের কারণে শ্রমজীবী, দিনমজুরদের কাজ পেতে সমস্যা হচ্ছে। তাদের আয়ও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
শহরের তাজের মোড় লিটন ব্রিজের পূর্ব পাশে যমুনা হোটেলের সামনে প্রতিদিন বসে শ্রম কেনাবেচার হাট। সেখানে দিনমজুরেরা কাজের আশায় অপেক্ষা করেন। রবিবার সকাল ৯টার দিকে সেখানে কয়েকজন দিনমজুরের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ‘গত ৩/৪দিন ধরে সূর্যের দেখা নাই। অ্যাজকা সকালে সূর্য উঠিছি। কিন্তুক তারপরেও কনকনা শীত লাগোছে। দুই দিন থ্যাকে কাজ পায়নি। অ্যাজকা রোদ ওঠায় কাজ জুটতে পারে।
সকাল ১০টার দিকে তাজের মোড়ে কথা হয় ভ্যান চালক কলিম উদ্দিনের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘ভোর বেলাত যকন রিকশা লিয়ে ব্যাইর হই তখন মনে হছিল ঠান্ডাত হাত-পার রড জড়ো হয়ে যাছিল। এখন সূর্য উঠায় অ্যানা ভালো লাগোছে। কয়দিন সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। অ্যাজকা সূর্যের মুখ দেখা গেছে। কিন্তুক তারপরেও বাতাস বহোছে। ক্যানক্যানে ঠান্ডা লাগোছে।
নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আনছার আলী বলেন, ‘শীতজনিত নানারোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।’
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, সকাল ৯টায় বদলগাছীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি শীত মৌসুমে নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে নওগাঁয় তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরের হিমেল বাতাসে মৃদু শৈত্য প্রবাহের কারণে তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। দিন রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আকাশ পরিস্কার থাকলেও শৈত্য প্রবাহের কারণে আগামী দু-তিনদিন তাপমাত্রা আরও কিছুটা নিচে নামতে পারে।’
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘প্রতি বছরই শীতের তীব্রতায় জবুথবু অবস্থায় থাকে উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁর শীতার্ত মানুষরা। চলতি শীত মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকার দু:স্থ, অসহায়, ছিন্নমূল, ভবঘুরে, হিজড়া, শ্রমজীবী মানুষসহ শিশুসদন-এতিমখানা, হরিজন ও বেদে পল্লীর শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া জেলার ১১টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভার জন্য স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল ক্রয় করে শীতার্ত মানুষদের মাঝে বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও মন্ত্রণালয় বরাবর আরও চাহিদা পাঠানো হয়েছে। শীতার্ত মানুষদের মাঝে এ শীতবস্ত্র বিতরণ এখনো চলমান রয়েছে।’