দুর্ঘটনার হটস্পট ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, বছরে ৩৯ মৃত্যু

0

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত এক বছরে ৬৮টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক। ২০২০ সালে চালু হওয়া ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জ অংশে গেল বছর শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৪৯৭টি। 

সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় একটি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাপা দেয় বেপারী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস। এতে প্রাণ গেছে দুই পরিবারের ৪ নারীসহ ৬ জনের। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় আরও অন্তত ৪ জন। দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে টোল প্লাজার কাছাকাছি এসে হঠাতই নিজের গতি বৃদ্ধি করে বেপারী পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি। 
     
বাসের ফিটনেস সনদ ও চালকের লাইসেন্স ছিল না। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাসচালক নুর উদ্দিন। পুলিশের কাছে দুর্ঘটনার জন্য গ্রেফতার বাস মালিক ডাবলু বেপারী নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন। 

দুর্ঘটনায় স্ত্রী, দুই কন্যা ও নাতিহারা রাজধানীর জুড়াইনের ব্যবসায়ী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আর যেন কারও স্বজন হারাতে না হয়, সেই পদক্ষেপসহ ধলেশ্বরী টোলপ্লাজার দুর্ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন তিনি।

ঘন কুয়াশা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক আইন মেনে না চলা- সব মিলিয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে ৫৫ কিলোমিটারের এ সড়কে। 

গত ২২ ডিসেম্বর ভোরে এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর থেকে হাঁসাড়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার অংশে চারটি দুর্ঘটনায় যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কার পিকআপ ভ্যান ও কাভার্ড ভ্যানসহ ১৩টি গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ। হয়। পরদিন ২৩ ডিসেম্বর ঘন কুয়াশায় ধলেশ্বরী সেতুর ওপর প্রাইভেট কার ও পিকাপভ্যানের সংঘর্ষে এক নারী নিহত ও অপর ৫ জন আহত হন। এরপর সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় বেপরোয়া বাস পিষে দেয় প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস। এতে দুই পরিবারের ৬ জন নিহত ও আহত হন ৪ জন।

মুন্সিগঞ্জের হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদির জিলানী বলেন, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৪টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৮৫ জন আহত হয়েছেন, মারা গেছেন ১০ নারীসহ ২২ জন। এরমধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরেই মারা গেছেন ১০ জন। 
     
সড়ক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কটিকে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে বলা হয়। মহাসড়কটি নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৫৫ কিলোমিটার এই মহাসড়ক নির্মাণে মোট ব্যয় ১১ হাজার কোটি টাকা।
  
পুলিশের টহলদারি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, পুলিশের সামনে কম গতিতে গাড়ি চালালেও পুলিশ দূরে চলে গেলে আবার বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা। সড়কের সার্ভিস লেনে যানবাহন চলাচলের জন্য গতিসীমার নির্দেশনা রয়েছে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, তবে মূল সড়কের গতিসীমা নির্ধারণ করা আছে প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার। মহাসড়কে একাধিক দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। সেখানে থাকা স্পিড গান দিয়ে দেখা গেছে, কোনো কোনো  যাত্রীবাহী বাসের গতি সর্বনিম্ন ৯৯ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহারে অনীহা রয়েছে অনেকের। এতে প্রায়ই গাড়ি চাপায় নিহত হচ্ছে অনেক পথচারী

মুন্সিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, সড়ক থেকে টোলপ্লাজাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশি থাকার কথা থাকলেও এখানেও দুর্ঘটনা হচ্ছে। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ঘন কুয়াশায় ফগ লাইট না জ্বালানো। রাতের আঁধারে, ঘন কুয়াশা এবং বৃষ্টির মধ্যে দুর্ঘটনা বেশি হয়। ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালালে, চালকদের বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ ও যাত্রীরা সচেতন হলে, দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here