আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগারওয়াল ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি এনামুল হক দোলনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা সিন্ডিকেটে সোনা চোরাচালান করে আওয়ামী লীগ আমলে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে তাদের হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাকারবারের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তারা। চুরির সোনায় ভাগ্য বদলে এরা রীতিমতো মাফিয়া হয়ে ওঠেন। সোনা চোরাচালানের টাকায় নামে-বেনামে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চোরাচালানের অর্থে এলাকায় গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। বৈধ উপায়ে সোনা আমদানির সুযোগ থাকলেও অতি মুনাফার লোভে চোরাচালানের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন দোলন-দীলিপ। নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ি) আসনের আওয়ামী লীগের এমপি এইচএম ইব্রাহীমও ছিলেন এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। তার মাধ্যমেই দোলন-দীলিপ সিন্ডিকেটকে সরাসরি মদদ দিতেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এই সিন্ডিকেট থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। সম্পৃক্ততা ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিদেরও। কাগজে-কলমে দিলীপ কুমার আগরওয়ালের বার্ষিক আয় ৪ কোটি ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৩ কোটি ৫৭ লাখ ১২ হাজার ৩৮২ টাকা।
তবে গত বছরের নভেম্বরের তথ্যানুযায়ী, দিলীপ কুমারের নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ প্রায় ১৩ কোটি ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৪ টাকা রয়েছে। অস্থাবর সম্পদ রয়েছে মোট ১৯১ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৩৪ টাকার।
স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪৯ কোটি ৭৯ লাখ ২১ হাজার ৩১১ টাকার অস্থাবর সম্পদ। তার স্ত্রীর কাছে নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ অন্যান্য বিনিয়োগ রয়েছে ২০ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার ২৩২ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩৫ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার ৪৮২ টাকা। এ ছাড়া তাদের কাছে নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ অন্যান্য বিনিয়োগ রয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গায় স্থাবর সম্পদ রয়েছে দিলীপ কুমারের। কৃষিজমি রয়েছে পাঁচ একরের বেশি, যার মূল্য ৭ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৭৪ টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে এক একরের বেশি, যার মূল্য ৮০ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০ টাকা। দালান রয়েছে ৯৪ হাজার ৮৪৯ বর্গফুট, যার মূল্য ৩০ কোটি ৪৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৮৮ টাকা। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ২ হাজার ৫২৬ বর্গফুট, যার মূল্য ৭৫ লাখ ৭ হাজার ৮০০ টাকা। স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ রয়েছে মোট ৩৯ কোটি ৪৯ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬২ টাকার। অভিযোগ রয়েছে, পাচার করা টাকায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় খুলেছেন একাধিক জুয়েলারি শোরুম। এ ছাড়া গ্রাহকদের মোজানাইট কিংবা জারকান পাথরকে আসল হীরার গ্যারান্টি দিয়ে প্রতারণা করেন দিলীপ আগরওয়ালের ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড।
এর আগে এসব অভিযোগ তদন্তে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের তদবিরে সেই তদন্ত থেমে থাকে।