জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতে। সর্বোচ্চ রেকর্ড ছড়িয়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। তীব্র তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে বগুড়ার জনজীবন। বৈশাখের এই খরতাপে কৃষকের ফসল পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। বাড়তি সেচে বাড়ছে উৎপাদন খরচও। তারপরও ফলন বিপর্যয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। তপ্ত রোদে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন।
জানা গেছে, তীব্র তাপদাহ ও খরতাপে বগুড়ার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকের ফসল পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে গেছে ফসলি জমি। জেলার কোথাও কোথাও মাটি ফেটে চৌচির। তীব্র খরায় পুড়ছে পাট, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, পেঁপে, পটল, করলা ও ভুট্টাসহ অন্যান্য সবজির ক্ষেত। এপ্রিলের শুরু থেকেই দেখা নেই বৃষ্টির। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে মরিচ চাষিরা। এতে আশানুরূপ ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলার কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, এপ্রিলের তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। চলতি মৌসুমে ফসলের দাম ভালো পাওয়ার আশা ছিল তাদের। কিন্তু তীব্র তাপদাহের কারণে লাভের পরিবর্তে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা। মরিচ ক্ষেতে পানির অভাবে মারা যাচ্ছে গাছ। প্রতি বছর এই সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় সেচ লাগতো না, এবার বাড়তি খরচে সেচ দিচ্ছে কেউ কেউ। এতে মরিচ আবাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কৃষকদের সব ধরনের ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বগুড়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় সর্বেচ্চা তাপমাত্র বিরাজ করছে। প্রতিকূল অবস্থা চলতে থাকলে সবজি জাতীয় ফসল উৎপাদনের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া এমন দাবদাহে বোরো ধান চিটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রখর রোদে পাট, মরিচ, কচু, মিষ্টি লাউ, বেগুন, পটল ও ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
বগুড়া সদর উপজেলার মানিকচক এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে মিষ্টি লাউয়ের আবাদ করেছেন। তীব্র রোদ আর তাপমাত্রায় গাছ শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। সেচ দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না। দুই বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অতিরিক্ত খরার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্র বিরাজ করছে। প্রতিকূল অবস্থা চলতে থাকলে সবজি জাতীয় ফসল উৎপাদনের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। প্রখর রোদে কৃষকদের আবাদি ফসল পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনো বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাপপ্রবাহ বিরাজ করায় অনেক জায়গায় খাল-বিল নদী-নালা শুকিয়ে গেছে। পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। ফলে চাষিরা তাদের জমিতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না। যে কারণে সংকটে পড়েছে কৃষকরা।